বুধবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ
  •   নির্মাণের এক বছর না যেতেই ফরিদগঞ্জ কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদের বেহাল দশা
  •   শেষ হলো পদ্মা-মেঘনায় জাল ফেলার নিষেধাজ্ঞা
  •   ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  •   মোবাইল ব্যবহারে নিষেধ করায় শিশু শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

গ্রামটিকে গ্রীন ও ক্লীন করার লক্ষ্য

একঝাঁক তরুণের হাত ধরে উজ্জীবিত ‘আলোকিত সাহাপুর’

একঝাঁক তরুণের হাত ধরে উজ্জীবিত ‘আলোকিত সাহাপুর’
মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল ॥

শাহরাস্তি পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের একটি গ্রাম সাহাপুর। মুসলিমণ্ডহিন্দু সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও মানবিক সেতু বন্ধের প্রতীক সাহাপুর গ্রাম। গ্রামটি ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিক দিয়ে সমৃদ্ধ হলেও সামাজিকভাবে এখনো উন্নতির শিখরে পৌঁছতে পারেনি। উক্ত গ্রামটিকে আদর্শ গ্রামে পরিণত করতে ২০১৮ সালের ২৩ জুন ৯ জন যুবক আলোকিত সাহাপুর নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলেন। এলাকার তরুণ সমাজকে একত্রিত করতে এ কাজটি করেন তরুণ ব্যবসায়ী মোঃ শহীদুল ইসলাম সোহেল। ঐক্য, সেবা, শান্তি এই মূলনীতি নিয়ে সর্বস্তরের জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, সামাজিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সাধন, টেকসই সমাজ উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল সুখী সমৃদ্ধশালী অবক্ষয়মুক্ত আদর্শিক গ্রাম গঠন করাই সংগঠনের লক্ষ্য। এছাড়াও পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি, একটি স্থায়ী সুন্দর সমৃদ্ধশালী আদর্শিক গ্রাম গঠন করা সংগঠনটির উদ্দেশ্য।

আলোকিত সাহাপুর যাত্রা শুরুর এক বছরের মাথায় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বেইস পরিচালিত বন্ধ থাকা গ্রামটির একমাত্র ফিডার স্কুলটি ভূমিদাতাদের মাধ্যমে দখল হয়ে যায়। দখলদারদের হাত থেকে স্কুলটিকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আলোকিত সাহাপুরের সদস্যরা। স্কুল রক্ষায় এলাকায় জনমত সৃষ্টি করে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে তারা। মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। প্রতিবাদের মুখে আলোকিত সাহাপুর স্কুলটি ফিরে পায়। বর্তমানে সংগঠনটির উদ্যোগে সাহাপুর পরিপূরক বিদ্যালয় নামে চালু রয়েছে। সংগঠনটির অর্থায়নে বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনার, জাতীয় পতাকা বেদী, টিউবওয়েল ও টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও তারা বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বাড়াতে মাঠে ফলের চারা রোপণ করে। বর্তমানে বিদ্যালয়কেন্দ্রিক সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সংগঠনটি।

স্বল্প সময়ের মধ্যেই সংগঠনটি জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত করোনাকালীন সময়ে এলাকাবাসীর সাথে থেকেছে সংগঠনের সদস্যরা। সমাজের অসহায়-গরিব মানুষের মাঝে খাবার ও অসুস্থদের জন্যে দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে সর্বাক্ষণিক সেবা প্রদান করা হয়। এছাড়াও সংগঠনটির পক্ষে ঈদ সামগ্রী ও গোস্ত বিতরণ করা হয়। সদস্যরা এলাকায় জনসচেতনতামূলক প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এলাকার অসহায় চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষ এখানে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে থাকেন। ‘রক্ত কণিকা’ আলোকিত সাহাপুর টিম নামে একটি গ্রুপ রয়েছে, যেটির মাধ্যমে রক্তদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ৯ জন দিয়ে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা একশ’ পার হয়েছে। এলাকার তরুণ সমাজ একটি ছায়াতলে এসে সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে শামিল হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়, মাদক, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপকর্ম পরিহার করে সামাজিক কাজে নিয়োজিত তরুণদের কার্যক্রমে খুশি এলাকাবাসী।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুজন রায় চৌধুরী জানান, ২০১৮ সালে আমরা সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলোকিত সাহাপুরের যাত্রা শুরু করি। ইতিমধ্যে আমারা এলাকার জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সংগঠনটির সেবামূলক ও গ্রামের সার্বিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং নিজের মধ্যে লালিত মানব সেবার স্বপ্ন পূরণে আমি ২০২০ সালে সংগঠনটির সাথে যুক্ত হই। আমি সংগঠনটির সাথে যুক্ত থেকে মানব সেবার কাজ করে যাবো।

সংগঠনের সভাপতি মোঃ শহীদুল ইসলাম সোহেল বলেন, আলোকিত সাহাপুরের সেবায় আমাদের এই গ্রাম হবে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের রোল মডেল-এমন উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য-এই গ্রামের উন্নয়ন এবং এই গ্রাম হবে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ও আদর্শ গ্রাম। উন্নয়নে আমাদের অনেক কর্মসূচি হাতে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : আমাদের আলোকিত সাহাপুরের পরিচালনায় সাহাপুর পরিপূরক বিদ্যালয়কে পুরো বাংলাদেশের মধ্যে আধুনিক এবং পরিবেশ বান্ধব মডেল স্কুল বানানো।

তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামকে সবুজের অবরণে সাজিয়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য, যা চলমান রয়েছে এবং পুরো বাংলাদেশের মধ্যে এই গ্রামটি হবে গ্রীন এবং ক্লীন গ্রাম। আমাদের স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এছাড়া গ্রামের সকলের সমন্বয়ে এমন কিছু প্রজেক্ট করা হবে যেগুলোর মাধ্যমে গ্রামের বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর মেডিকেল সেবা প্রদান করা হয় যার মাধ্যম গ্রামের সবাই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং ঔষধ পাবে। আমাদের গ্রামকে মাদকমুক্ত রাখতে আমরা সবসময়ই কাজ করে যাবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়