শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

রিকশাচালক সোলেমান ৩০ বছর শুধু লাশই টানছেন

রিকশাচালক সোলেমান ৩০ বছর শুধু লাশই টানছেন
এম. কে. মানিক পাঠান ॥

অসীম সাহসী আর উদ্যমী মোঃ সোলেমান বেপারী (৬০)। এখনও ছুটে যান বেওয়ারিশ কিংবা আত্মহত্যা, পচা, গলাসহ সকল লাশ বহন করতে। গোলগাল মুখে দাড়ি। মাঝারি দেহের অধিকারী সোলেমান। এলাকায় ‘লাশবাহী সোলেমান’ নামে পরিচিত। ফরিদগঞ্জ পৌরসভা এলাকার চরকুমিরা গ্রামের বাসিন্দা সোলেমান বেপারী।

মাত্র দুই শতাংশ জমির উপরে বসতভিটা তার। পারিবারিক জীবনে এক কন্যা সন্তানের পিতা। এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ ৩ সদস্যের পরিবার। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে সারাবছর অভাব-অনটন লেগেই আছে। তার পরেও ছাড়েননি এই পেশা। ফরিদগঞ্জ থানার ওসি, এসআই থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই সোলেমান নামের সঙ্গে পরিচিত। পুরো থানা এলাকায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেই লাশ বহন করতে ডাক পড়ে তার। এছাড়াও গলায় ফাঁস, বিষপানে আত্মহত্যা, পুকুরে ডুবে মৃত্যু, কবর থেকে ওঠানো গলিত লাশ বহন করা তার কাছে কঠিন কোনো কাজ নয়। ঘটনাস্থল থেকে ভ্যানে লাশ নিয়ে ছুটে যেতে হয় জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে জেলা শহর থেকে দূর-দূরন্তে, গ্রামে-গঞ্জে রাতের আঁধারে গিয়েও স্বজনদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হয় মৃতদেহ। আবার বেওয়ারিশ লাশ হলে তার দাফনের কাজটিও করতে হয়। বিনিময়ে তার ভাগ্যে জুটে সামান্য কিছু টাকা।

এভাবে এলাকায় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লাশ টানছেন সোলেমান। জীবন-জীবিকার যুদ্ধে বিচিত্র পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এ যুদ্ধে কখনও হার মানেননি। সোলেমানের স্ত্রী পেয়ারা বেগম বলেন, প্রথম প্রথম বাড়ির ছেলে-মেয়েরা তার ধারে-কাছে যেতো না। এমনকি তার কাছে যেতে আমিও ভয় পেতাম। কোনো কোনো সময় স্বজনদের বাড়িতে লাশ পৌঁছে দিয়ে ভোর বেলা বাড়িতে ফিরতো। এখন আর এটা নিয়ে পরিবারের কেউ কিছু বলে না। বরং কাজটি মহৎ ও সেবামূলক বলে মনে করে সবাই।

সোলেমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে এক সময়ে রিকশা চালাতাম। প্রায়ই চতুরা হাসপাতালের মূল গেটে ও থানার সামনে রিকশা নিয়ে যাত্রীর জন্যে বসে থাকতাম। প্রায় প্রতিনিয়ত থানার অফিসারদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় যেতাম।

তিনি বলেন, তৎসময়ে থানার একজন অফিসারের উৎসাহে আমি লাশ বহনের কাজে জড়িয়ে পড়ি। একটা সময় লাশ বহন করতে অনেক ভয় পেতাম।

সোলেমান বেপারীর মতে, এই কাজটি একটি সেবা ও মহৎ পেশা। আজ পর্যন্ত একাধারে লাশ বহনের কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও দু মুঠো ডাল-ভাতের আশায় এই বৃদ্ধকে এখনও লাশ টানতে দেখা যায়। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি থানায় একটি করে লাশবাহী অটোভ্যান ও চালক নিযুক্ত থাকলে এই সেবাটি সহজে দেয়া যেতো।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, সোলেমান আছেন বলে অপমৃত্যুর ও বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে সমস্যা নেই। যেখানে যখন দরকার তাকে ডাক দিলেই হাজির। এর পরে সোলেমানের মতো মানুষ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে। এ কাজে তার তেমন চাহিদাও নেই। যে যেমন পারে তাকে খুশি করার চেষ্টা করে। সোলেমান একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। লাশ বহনে তার কোনো গড়িমসি নেই।

এ পর্যন্ত কতগুলো লাশ বহন করেছে সোলেমান তার হিসাবও রাখেননি। তবে ৬ থেকে ৭ হাজার লাশ হবে বলে তিনি জানান। এ কাজে শুরুর দিকে মনের মাঝে ভয়-ভীতি থাকলেও এখন সবকিছুই স্বাভাবিক বলে মনে হয় তার কাছে।

‘মাসে কত টাকা আয় হয়’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ যখন মারা যায় তখন স্বজনরা হয়ে যায় অসহায়। তাই লাশ বহনে দর কষাকষি না করে মানুষ খুশি মনে যা দেয়, সেটা নিয়ে আমিও খুশি থাকি। এতে দেখা যায়, প্রতি মাসে গড়ে আয় হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অনেকেই আবার খুশি হয়ে বকশিশও দেয়। এই অর্থ দিয়ে কোনো রকমে চলছে তাদের জীবন। সোলেমানের কাছে এটি একটি মহৎ পেশা। তিনি বলেন, ‘সব মানুষকে কবরে যেতে হবে।’ এটা ভেবেই আজও লাশ টানছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়