প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০০
খেলার মাঠের দুরবস্থা ভাবাচ্ছে পুরাণবাজারবাসীকে

একদিকে নতুন প্রজন্ম ক্রমশ বিমুখ হচ্ছে খেলাধুলা থেকে, অন্যদিকে যাঁরা এগিয়ে যাচ্ছেন কৃতিত্বের সঙ্গে, তাঁরা শহর ছাড়ছেন উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্যে। মাঠ সমস্যায় জর্জরিত চাঁদপুর জেলা শহরের প্রধান ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজারের ক্রীড়া মহল। ক্রিকেট হোক বা ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, অ্যাটলেটিক্স, হা-ডু-ডু খেলার বেশ চর্চা ছিলো এখানে। নতুন বাজারের সাথে পাল্লা দিয়ে খেলাধুলা হতো এখানে, কিন্তু খেলাধুলার উপযুক্ত মাঠ স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও পায়নি পুরাণবাজারবাসী। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সকল খেলাধুলার কেন্দ্রবিন্দু ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা উচ্চ বিদ্যালয় (এম এইচ হাই স্কুল) মাঠ।যেটি মধুসূদন হাই স্কুল মাঠ নামে পরিচিত। মাঠটি সমতল না থাকায় খেলাধুলার জন্যে অনুপযুক্ত মাঠে পরিণত হয়েছে এটি। এখানকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাইমারি স্কুল শিক্ষার্থী এবং পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন ক্লাবের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র এই মধুসূদন হাই স্কুল মাঠ। নিজেদের ইচ্ছায় কিছুসংখ্যক স্কুল শিক্ষার্থী এবং স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্য ছাড়া আর চোখে পড়ে না তেমন আনুষ্ঠানিক খেলাধুলা। মাঠের আশেপাশে পাড়া মহল্লার বা স্কুলের কিছু কিছু শিশুদের ফুটবল ক্রিকেট খেলতে দেখা গেলেও হারিয়ে গেছে টুর্নামেন্ট, ফুটবল, ক্রিকেট ও ভলিবল প্র্যাকটিস। স্কুল সমূহের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ইন্টার স্কুল ছেলেমেয়েদের ফুটবল এবং স্থানীয় ক্লাবগুলোর আয়োজনে ফুটবল- ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন থাকতো এই মাঠে। পাশাপাশি চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্ভুক্ত নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্র, পশ্চিম শ্রীরামদী ক্রীড়া চক্র এবং ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাবেরও দল গঠনের ক্রীড়া চর্চা হতো এই মাঠে। ক্রিকেট প্র্যাকটিসের জন্যে একটি পিচও ছিলো। দীর্ঘদিন মাঠ সংস্কার না করায় অসমতল মাঠ কেড়ে নিয়েছে এখানকার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার চর্চা। স্কুলের পুরো মাঠ জুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। চারিদিকে ঝোপ জঙ্গল আর স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা।
একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মো. মুজিবুর রহমান জানান, বালক-বালিকা দুটি হাই স্কুল, দুটি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, দুটি কিন্ডারগার্টেন, মেরকাটিজ রোডের উসমানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, অপরদিকে ভাই ভাই ক্লাব, নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্র, হরিসভা এলাকার পশ্চিম শ্রীরামদী ক্লাব, লোহার পুলের সানরাইজ ক্লাবসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার খেলাধুলা করার জন্যে মধুসূদন হাই স্কুল মাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। একসময় এখান থেকে অনেক খেলোয়াড় জাতীয় ও জেলা লিগ টুর্নামেন্টে খেলেছেন। এখন আর সেই খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায়, আর স্কুল কর্তৃপক্ষের অযত্ন-অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী এই মাঠের গুরুত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। এটিকে এখন মধুসূদন হাই স্কুল খেলার মাঠ বলা যাবে না। কেননা পরিস্থিতি এমন হয়েছে, যে কেউ দেখলে মনে হবে গরুর মাঠ। এমনকি নেই একটা উপযুক্ত মাঠও। মধুসূদন হাই স্কুল মাঠের বর্তমান এমন বেহাল দশার জন্যে স্কুল কর্তৃপক্ষও কম দায়ী নয়। খেলাধুলার জন্যে মাঠটি অতি দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ খেলাধুলা। খেলোয়াড়রা ধারণ করেন উন্নত ও উদার সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ। একটি দেশ বা জাতি তখনই খেলাধুলায় উন্নতি করতে পারে, যখন গড়ে উঠে তার ক্রীড়া-সংস্কৃতি। দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য পেতে হলে কিংবা সবার মাঝে খেলাধুলার উপকারিতা, গুরুত্ব ও মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিতে হলে ক্রীড়া চর্চার সংস্কৃতি গড়ে তোলাটা অপরিহার্য। বিশেষত, আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া দেশে এটা খুবই প্রয়োজন। এখন মনে হতে পারে, খেলাধুলা তো স্রেফ বিনোদনের অংশ। তার আবার কিসের সংস্কৃতি? এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে বলা যেতে পারে, সংগীত, নৃত্য, নাটক, সিনেমা, শিল্পকলাও তো বিনোদনেরই মাধ্যম। এসব মাধ্যম তো সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত। নানানভাবে চলছে এর চর্চা। এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সাংস্কৃতিক চেতনা। এজন্যে আছে অনেক সংগঠন। আছে নানান রকম কার্যক্রম। তাহলে খেলাধুলা কেন নয়? খেলাধুলার চর্চা কি সীমিত পরিসরে বন্দী হয়ে থাকবে? নাকি কেবলই হুজুগ হয়ে থাকবে? আমাদের দেশে খেলাধুলার চর্চা চলছে অনেক আগে থেকেই। বিপুল জনগোষ্ঠীকে ছুঁয়ে যায় বিনোদনের এই মাধ্যমটি। দারুণভাবে তাদেরকে প্রভাবিতও করে। এমন একটা অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও ক্রীড়া-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। খেলাধুলাকে ঘিরে নেই নানানমুখী সাংস্কৃতিক ও মননশীল তৎপরতা। যে কারণে তা প্রোথিত করা যায়নি জনজীবনের গভীরে। চাঁদপুর জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা পুরাণবাজার। এখানে পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ড অবস্থিত। এই অঞ্চলের মানুষের খেলাধুলার প্রধান মাঠটি খেলার উপযুক্ত করা সকল মহলের দাবি। এ মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেটসহ নানা খেলা খেলে জাতীয় দলেও অংশগ্রহণ করেছেন অনেকে। আর এখন এই মাঠেরই চলছে চরম দুরবস্থা।
বর্ষার সময় মাঠের গর্তে পানি জমে নালায় পরিণত হয়। আর কোনো উপায় না পেয়ে এই কাদা পানিতেই খেলাধুলায় দিনভর মেতে থাকে স্থানীয় শিশু কিশোর-তরুণরা। মাঠটি অরক্ষিত থাকায় মাদক সেবীদের আড্ডাও কিন্তু কম হয় না।