বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

প্রণম্য শিক্ষাগুরু মিসেস এম বি রয়ের প্রয়াণে
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

শৈশব থেকেই সেন্ট প্ল্যাসিডস্ স্কুল নামটি আমি তো বটেই, আরও অনেক মানুষের মনে জাগিয়ে তুলেছে শিহরণ। আঠারোশ তিপ্পান্ন সালে পাথরঘাটার গীর্জা সংলগ্ন প্রাঙ্গণে স্থাপিত এ বিদ্যালয় কত সহস্র মানব-কুসুমকে প্রস্ফুটিত করে তুলেছে তার কোনো হিসাব নেই। যাঁরা মানুষের কলিগুলোকে ফুল করে ফোটানোর পবিত্র ব্রত নিয়ে এখানে রোজ ভোরে আসতেন তাঁদের একজন এম. বি. রয়। আমরা যখন তাঁকে ক্লাসে পাই তখন তাঁর মাথার চুলে কাশের ছোঁয়া লেগে গেছে। তিনি তখনই ছিলেন পঞ্চাশোত্তীর্ণ। প্রথম দেখা হয় আমাদের সাথে চতুর্থ শ্রেণির গণিত ক্লাসে। ‘এ’ সেকশনে তিনি তাঁর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে যখন আসতেন তখন মনে হতো মিনির জন্যে কাবুলিওয়ালার মতো একজন মোরব্বা আর মেওয়ার সম্ভার নিয়ে এসেছেন। তিনি তো মেওয়া আনতেন বটেই। গণিত ও জ্ঞানের মেওয়ায় তিনি একঘণ্টা আমাদের ব্যস্ত রাখতেন। কারও উপর রুষ্ট হলে শুধু রাগত স্বরে বলতেন, অ্যাই, বুজরুকি করবে না।

স্কুলে আন্তঃক্লাস ফুটবল প্রতিযোগিতায় চতুর্থ শ্রেণি বনাম পঞ্চম শ্রেণির ফাইনাল খেলা ছিলো। টিচার আমাদের গণিত শেখালেও তাঁর দায়িত্ব ছিলো পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণি-শিক্ষকের। ফলে আমাদের প্রতি সমর্থন দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিলো না। খেলার পরদিন তিনি যথারীতি এসে আমাদের গণিত ক্লাসের কার্যক্রম শুরু করে দিলেন। ক্লাসের ফাঁকে শুধু একবার বললেন, তুমি তো নাকি গতকাল আমার দলকে ঠেকিয়ে দিয়েছিলে প্রায়। অনেক ভালো গোল কিপিং করেছো শুনলাম। এর পরের বছর আমরা ক্লাস ফাইভে উঠে তাঁর হাতে পড়লাম। অর্থাৎ তিনি আমাদের ক্লাস টিচার হলেন। এবার আন্তঃশ্রেণি ফুটবল ফাইনালে আমরা তাঁর জন্যে শিরোপা নিয়ে আসলাম। টিচার আমাদের অভিনন্দন জানালেন। তবে তা নিয়ন্ত্রিত উচ্ছ্বাসে। ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষার কোচিংয়েও তিনি আমাদের ক্লাস নিতেন। আমাদের কখনো মনে হয়নি একটু ফাঁকি দিই। টিচার এম. বি. রয় খুব ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ধরে রাখতে পারতেন। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সেন্টার ছিলো মুসলিম হাই স্কুলে। টিচার সেখানে গিয়েছিলেন আমাদের দেখতে। আমার মা তাঁর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছিলেন। জবাবে টিচার বলেছিলেন, ‘আপনার ছেলে ম্যালা লেখে’। তাঁর বলার মধ্যে যা ছিলো তা আমার মায়ের মুখকে আলোকিত করে তুলেছিলো। টিচারের বড় ছেলে জেমস ভাই খুব ভালো বাস্কেটবল খেলতেন। তাঁর ছোট ছেলে জন ভাই ছিলেন আমাদের অগ্রজ স্কাউট।

আমার শৈশব ও কৈশোর নির্মাতা প্রণম্য শিক্ষকের প্রয়াণ আমাকে ব্যথিত করে তুলেছে। তাঁর স্নেহ আমাদের পাথেয়। পরম শান্তিতে থাকুন পরপারে আমাদের জ্ঞানদাত্রী মহীয়সী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়