বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

এভাবে সকল লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হোক

অনলাইন ডেস্ক
এভাবে সকল লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হোক

গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে, ঢাকা-চাঁদপুর রূটে ১৯০ টাকার লঞ্চ ভাড়া ৫০ টাকা! এটা যে আজগুবি খবর নয় সেটা প্রমাণ করতে প্রতিবেদক উজ্জ্বল হোসাইন সংবাদের সাথে সি হর্স কর্পোরেশনের ‘ময়ূর-১০’ লঞ্চের সুলভ শ্রেণীর ৫০ টাকার টিকেটের ১০/৭ তারিখ সম্বলিত একটি ছবি সংযুক্ত করেছেন। তার এ সংবাদটি চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনে বেশ শেয়ার হয়েছে। সংবাদটিতে উজ্জ্বল হোসাইন যে নিজেই ময়ূর-১০ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন সেটি তার সংবাদ বিবরণী পড়ে অনুধাবন করা যায়। তিনি জানান, ঢাকার লালকুঠি লঞ্চঘাটে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার এমভি ইমাম হাসান-৫ ও বেলা সাড়ে ১২টার এমভি ময়ূর-১০ লঞ্চের মধ্যে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা চলছিলো। এমতাবস্থায় যাত্রী আকর্ষণে ঢাকা থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ডেকের তথা সুলভ শ্রেণীর ভাড়া ১৯০-২০০ টাকার পরিবর্তে ১৪০-১৫০ টাকা কমিয়ে মাত্র ৫০ টাকা বলে চিৎকার করা হয়। তারপর বেলা সাড়ে ১২টায় ময়ূর-১০ লঞ্চটি ঢাকা ছেড়ে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় বিকেল ৩টায় চাঁদপুর পৌঁছে যায়। এমনটি গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে বলে লঞ্চের কর্মকর্তা জানান।

হঠাৎ করে ঢাকা-চাঁদপুর লঞ্চের ভাড়া ও সময় কমিয়ে চলাচলের রহস্য কী সেটা জানা না গেলেও এটা ধারণা করা যায় যে, চাঁদপুর শহরতলীর বাবুরহাট থেকে পেন্নাই হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচলকারী বাসগুলো লঞ্চের চেয়ে কম ভাড়ায় ও কম সময়ে যাতায়াত করে ক্রমশ জনপ্রিয়তা অর্জন করায় যাত্রীসংখ্যা বেড়ে চলছে। অতি সম্প্রতি একই রূটে বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিস চালুর কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও লোকমুখে প্রচার হওয়ায় বস্তুত ঢাকা-চাঁদপুর-ঢাকা রূটের জনপ্রিয় লঞ্চ ময়ূর-১০ কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছে। সেজন্যে তারা যাত্রী ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করতে চাচ্ছে। এই কৌশল যে একেবারে বৃথা যাবে না সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। কেননা নৌপথে যাতায়াত পরিবেশবান্ধব, যানজটমুক্ত, স্বাস্থ্যকর ও দুর্ঘটনার কম ঝুঁকিপূর্ণ। নৌপথে ভ্রমণকালে আসন ছেড়ে হাঁটাচলা করা যায়, কেবিন নিলে বিছানায় শুয়ে ঘুমানো যায়, খাবার কিনে খাওয়া যায়, প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে টয়লেট ব্যবহার করা যায়, সর্বোপরি নামাজ পড়া যায়। যেটা বাস না থামালে মোটেও সম্ভব নয়।

নৌপথে যাতায়াতের উপকারিতা উপলব্ধি করে চাঁদপুর ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে এবং সেবার মান বৃদ্ধিতে যাত্রীসংখ্যাও বাড়ে। কিন্তু ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপে ও পরবর্তীতে তেলের দাম বৃদ্ধিতে চাঁদপুর-ঢাকা-চাঁদপুর রুটের লঞ্চগুলোর গতি ও সেবার মান লোপ পেতে থাকে। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময়ের পরিবর্তে লঞ্চগুলো ঢাকা ও চাঁদপুরের মধ্যে যাতায়াতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগাতে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভোর ৬টায় চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটি সকাল ৯টার পূর্বে ঢাকা পৌঁছে যাত্রীদের অফিস ধরার সুযোগ এনে দিয়ে যে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছিলো, সেই সুযোগ প্রত্যাহার করে তথা সকাল ১০টা বা তার পরে ঢাকা পৌঁছে সেই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এভাবে অন্যান্য লঞ্চ ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগিয়ে, সেবার মান কমিয়ে, খাবারের অস্বাভাবিক মূল্য রেখে, যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করেছে। যান্ত্রিকতায় আচ্ছন্ন ব্যস্ত মানুষ কিন্তু বসে থাকেনি। তারা চাঁদপুর-ঢাকা যাতায়াতে বিকল্প রূট নিজেরাই বের করে নিয়েছে। তারা চাঁদপুর শহর থেকে ১০ টাকা খরচে বাবুরহাট গিয়ে মাইক্রোবাস/প্রাইভেট কারে ৩০০ টাকায় কিংবা সিএনজি অটোরিকশাযোগে মতলব ব্রীজ, শ্রীরায়েরচর ব্রীজ ও দাউদকান্দিতে জাতীয় মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী ব্রীজ পর্যন্ত তিন দফায় পৌঁছে তারপর বাসযোগে সর্বসাকুল্যে মাত্র দু-আড়াই ঘন্টায় ১৫০-২০০ টাকা ভাড়ায় ঢাকা পৌঁছার উপায় অবলম্বন করেছে। এটি দেখে বাস মালিকরা ২০০ টাকায় বাবুরহাট-ঢাকা বাস চলাচলের রূট বাগিয়ে নিয়েছে।

চাঁদপুর-ঢাকা-চাঁদপুর রূটে ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত লঞ্চ মালিকরা যাত্রীসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখে একের পর এক চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের লঞ্চ নামিয়ে যাত্রীবান্ধব হবার পরিবর্তে যাত্রীদের শোষণ করার হীন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। যাত্রীরা কিছুদিন সেটা সহ্য করেছেন এবং অনেক যাত্রী প্রতিবাদ করে লঞ্চ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে কম-বেশি হেনস্তা হয়েছেন। এমতাবস্থায় প্রত্যাশার অনুকূলে পাশে পায়নি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিএ), এমনকি পুলিশকেও। ক্ষুব্ধ, বিরক্ত ও অভিমানাহত হয়ে অনেক লঞ্চযাত্রী হয়ে গেছে লঞ্চবিমুখ ও সড়কের বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী। এমতাবস্থায় লঞ্চের যাত্রীসংখ্যায় নেমেছে ধস এবং সড়কের বেড়েছে যশ। এই যশহেতু চাঁদপুর শহরতলীর বাবুরহাট ও ঢাকার মধ্যে যাতায়াতে উন্নত যানবাহন (এসি বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রো সার্ভিস)-এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলছে। এটি ঠেকাতে ঢাকা-চাঁদপুর-ঢাকা রূটের লঞ্চগুলোর ভাড়া ও সময় কমানোর বিকল্প কিছু আছে বলে আমরা মনে করি না। এ বিষয়টিতে কেবল ময়ূর-১০ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হলে হবে না, অন্যান্য লঞ্চ কর্তৃপক্ষেরও সেটা হতে হবে। এজন্যে লঞ্চ মালিক সমিতিকে ইতিবাচক তথা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়