প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
শুভ উদ্যোগ, দেখার অপেক্ষা কবে শুরু হয়

প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাকাতিয়া বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি উৎপন্ন হয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ে। তারপর এটি কুমিল্লা, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুর শহর ও লক্ষ্মীপুর জেলার হাজীমারা দিয়ে দুটি ধারায় মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। চাঁদপুরের আট উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলায় ডাকাতিয়ার প্রবাহ রয়েছে। ডাকাতিয়া ও মেঘনাকে ঘিরে চাঁদপুরের চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচর উপজেলা এবং লক্ষ্মীপুরের ৩টি উপজেলা নিয়ে প্রায় একশ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধবিশিষ্ট চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সিআইপি) গঠিত। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বাড়লেও ডাকাতিয়া নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও মৎস্য উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। আর ডাকাতিয়ায় স্থায়ী নিবাস গড়েছে কচুরিপানা। দীর্ঘদিন কচুরিপানা পরিষ্কার ও খনন না করায় ডাকাতিয়ার কোনো কোনো স্থানে কচুরিপানার ওপর দিয়ে শিশুরা হেঁটে নদী পার হতে পারে। এই ডাকাতিয়ার কচুরিপানা পরিষ্কারের নামে বিভিন্ন সংস্থার কতো প্রকল্প যে গৃহীত হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু টেকসই সুফল দেয়নি কোনো প্রকল্পই। সেজন্যে সিআইপির বাসিন্দাদের কম-বেশি ক্ষোভ ও অভিযোগ রয়েছেই। এই ডাকাতিয়াকে দখল, দূষণ ও কচুরিপানা মুক্ত করে পর্যটক আকর্ষণের স্বপ্ন ও পরিকল্পনায় বিভোর হয়েছিলেন ফরিদগঞ্জের সদ্য প্রয়াত সাবেক এমপি প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া। এটিকে কেউ কেউ স্বপ্নবিলাস বললেও এটি যে সময়োচিত সেটি কালান্তরে প্রমাণযোগ্য বলে পরিবেশবিদ ও সুধী পর্যবেক্ষকদের অভিমত। এমন প্রেক্ষাপটে জানা গেলো ডাকাতিয়া নদীর কচুরিপানা দ্রুত অপসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং সেমতে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার ডাকাতিয়া নদীতে জমে থাকা কচুরিপানা দ্রুত অপসারণ করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাফায়েত আহাম্মদ সিদ্দিকী, সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, বিডি ক্লিনের সদস্যবৃন্দ, রেড ক্রিসেন্টের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন। সভাপতি তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় ৭ বছর আগে নদী উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। নদীর নাব্যতা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এর প্রেক্ষিতে ডাকাতিয়া নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।
নদীকে বাঁচাতে সরকারি প্রয়াসের পাশাপাশি যে বেসরকারি উদ্যোগে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হয় অতি সম্প্রতি তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে নবনির্বাচিত এমপি, বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। চলতি ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার তাঁর আমন্ত্রণে নিজ অর্থায়নে ঢাকা থেকে বাসযোগে ছয় শতাধিক বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবী এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সম্মিলিতভাবে পরিচ্ছন্ন করে চুনারুঘাটের মৃতপ্রায় খোয়াই নদ। এ ব্যাপারে উঠেনি কোনো অনিয়মের অভিযোগ, কেবল দেখা গেছে অনেক সন্তুষ্টি ও উচ্ছ্বাস। আমরা জেনে আনন্দিত হলাম যে, ডাকাতিয়া নদীর কচুরিপানা পরিষ্কারে 'পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের স্বপ্ন' শ্লোগানে গঠিত দেশের খ্যাতনামা স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন বিডি ক্লিনকে সংশ্লিষ্ট করার পরিকল্পনায় তাদের প্রতিনিধিকে প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত করানো হয়েছে। অতীতে ডাকাতিয়ার কচুরিপানা পরিষ্কারের উদ্যোগ/প্রকল্পে কী কী অনিয়ম হয়েছে, সেটা ভুলে গিয়ে এবার জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও ইউনিয়ন পরিষদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সকল ধরনের স্বেচ্ছাকর্মীকে উদ্বুদ্ধ করে সম্মিলিতভাবে ডাকাতিয়া নদীকে কচুরিপানামুক্ত করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩ জুন রাজধানী ঢাকার উদ্যমী যুবক ফরিদ উদ্দিন ও তাঁর বন্ধুরা 'পরিচ্ছন্নতা শুরু হোক আমার থেকে' মূলনীতিতে প্রতিষ্ঠা করে বিডি ক্লিন। বর্তমানে দেশব্যাপী বিডি ক্লিনের চুয়াল্লিশ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাকর্মী রয়েছে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস ঘোষণা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের খালসমূহ পরিষ্কার ও সর্বশেষ হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের খোয়াই নদ পরিষ্কার করে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। আমাদের বিশ্বাস, চাঁদপুরের ডাকাতিয়া পরিষ্কারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে বিডি ক্লিন তেমন আলোচনাতেই আসবে ইনশাল্লাহ। এখন দেখার অপেক্ষা, শুভ উদ্যোগটির বাস্তবায়ন কবে শুরু হয়।