প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪০
অভিযোগ গুরুতর, ব্যবস্থা নেয়া হোক

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য শামীমের অবৈধ ভূমি দখল, চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কচুয়ায় মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ মানুষ। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল ২০২৫) বিকেলে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের জগতপুর বাজারে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের আয়োজনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে জগতপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুল মতিন জানান, ২০২৩ সালে আমরা জগতপুর পূর্বপাড়া শোল পুকুরিয়া বাড়ির সামনে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শাহী ব্লক কারখানাটি শুরু করলে শামীম তার দলবল নিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। উপজেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক গাজী রুবেল, রসুলপুর গ্রামের সফিকুল ইসলাম, কাউছার জানান, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এমপির প্রভাব খাটিয়ে তার কর্মী শামীম জগতপুর বাজারের যাত্রী ছাউনি দখল করে নিজস্ব কার্যালয় গড়ে তোলেন। এ কার্যালয় থেকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। কার্যালয়টি টর্চারসেল হিসেবে জানতো সাধারণ মানুষ । শামীম তার ক্যাশিয়ার সিএনজি ড্রাইভার সুমন, নুরু, মাসুদসহ অন্যদের দিয়ে চাঁদাবাজি করাতেন। ক্যাশিয়ার সুমনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন দেখলে তা সহজে বোঝা যাবে। জার্মান প্রবাসী মিঠুন এক ভিডিও বার্তায় তার শাশুড়ি ও স্ত্রীর ওপর অমানুষিক নির্যাতনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তাদের ব্লাকমেইল করে প্রায় পঞ্চাশ লাখ টাকা ওমর ফারুক শামীম হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে ওমর ফারুক শামীম ছিলো আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনীত প্রার্থী । তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মারুফ আহমেদ সুমনকে হত্যার হুমকিসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। এ বিষয়ে মারুফ আহমেদ সুমন বলেন, আমি চেয়ার প্রতীকে নির্বাচন করতে গিয়ে শামীমের হামলার শিকার হয়েছি। সে দলবল নিয়ে একাধিকবার আমাকে হত্যার হুমকি দেন। এছাড়া আমার বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে আমাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন।
অভিযুক্ত ওমর ফারুক শামীম জগতপুর গ্রামের কাজী বাড়ির আবু সুফিয়ানের ছেলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত দিনে নানান অনিয়ম, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন করলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন শামীম। জনসাধারণের মনে স্বস্তি ফিরাতে দ্রুত ওমর ফারুক শামীমকে গ্রেফতারের জন্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ওমর ফারুক শামীমের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে খুব শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ওমর ফারুক শামীমের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের সংবাদটি মো. নাছির উদ্দিন পরিবেশন করেছেন। এই সংবাদে কচুয়ার এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় বা অন্য কোথাও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়েরের তথ্য উল্লেখ নেই। যদিও থানার ওসি উল্লেখিত অভিযোগ সমূহ তদন্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয়, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে বলতে চাই, ওমর ফারুক শামীমের বিরুদ্ধে তার দল ক্ষমতায় না থাকার সুযোগে মানববন্ধনে যতো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেসব অভিযোগকে গুরুতর বলে মনে হয়। এসব অভিযোগ লিখিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে যদি দাখিল হয়ে থাকে, তাহলে অবিলম্বে ওমর ফারুক শামীমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।
উল্লেখ করা দরকার, ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও দুর্বলতাহেতু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে তাদের এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা এমন কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যারা নিজেদের এলাকায় এমপি/নেতার নাম বেচে প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে এমন কোনো অপকর্ম নেই যে করেন নি। এক্ষেত্রে চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ ও মতলব উত্তরের নিকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে অনেক। সমস্যা হলো, ভুক্তভোগীরা সাহস করে যথাসময়ে যথাস্থানে অভিযোগ উত্থাপন করেন না। এমনটি করলে এমন অপকর্মের হোতাদের বিরুদ্ধে তাদের দল ক্ষমতায় থাকাবস্থাতেও ব্যবস্থাগ্রহণ করানোর নজির স্থাপন করা যায়। চাঁদপুর সদর উপজেলায় রয়েছে এমন দৃষ্টান্ত।