প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৭
বিদ্যুৎ বিলে যখন মাটিচাপা ভোগান্তি-

শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠার নিচের দিকে একটি সংবাদের শিরোনাম অনেক পাঠকেরই নজর কেড়েছে। শিরোনামটি হচ্ছে ‘ফরিদগঞ্জে আকাশচুম্বী বিদ্যুৎ বিলে গ্রাহকের মাটিচাপা ভোগান্তি’। শিরোনামে প্রতিবেদক ‘চরম ভোগান্তি’ না লিখে ভোগান্তির আত্যন্তিক রূপকে ‘মাটিচাপা ভোগান্তি’ লিখায় সেটি কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। সেই কৌতূহল নিবৃত্ত করতে সংবাদটির গভীরে যাওয়া যাক। সংবাদটিতে প্রতিবেদক শামীম হাসান লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে এপ্রিল ২০২৫ মাসের পল্লী বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। হঠাৎ করে কয়েক গুণ বেশি বিল আসায় হতবাক হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল ২০২৫) ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক গ্রাহক বিল সংশোধনের দাবিতে ভিড় করেছেন। তাদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ, ছকিনা, মনোয়ারা, রাকিবসহ অনেকে অভিযোগ করেন, পূর্বে যেখানে তাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল ৪-৫ শত টাকা আসতো, সেখানে এবার ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকা এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত এসেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, সঠিকভাবে মিটার রিডিং না তোলার কারণে এই অস্বাভাবিক বিল হয়েছে। তাদের দাবি, নিয়ম মেনে মিটার রিডিং করলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. নাজির উল্লাহ বলেন, “এপ্রিল মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি মাসে ৯৫ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পিডিবি থেকে পারচেজ করা হয়েছে, যা গত আড়াই বছরে সর্বোচ্চ। ফলে ব্যয় বেশি হওয়ায় বিলও তুলনামূলক বেশি এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “এখানে ১ লাখ ২ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এতো বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে বর্তমানে মিটার রিডিংয়ের প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো গড়বড় নেই।” অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা দ্রুত সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
গরম বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ বিল সাধারণত দ্বিগুণ বা তার কাছাকাছি হয়। তাই বলে তিন/চার গুণ বা তার চেয়ে অস্বাভাবিক কিছু হওয়াটা গ্রাহককে ভোগান্তির এমন মাত্রায় পৌঁছায়, যাতে গ্রাহক মাটিচাপার মতো কষ্টই অনুভব করে। একসময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর বিরুদ্ধে ভূতুড়ে বিল দিয়ে গ্রাহক হয়রানির লাগাতার অভিযোগ ছিলো। প্রিপেইড মিটারে পিডিবির বিরুদ্ধে সে অভিযোগ অনেক কমলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে সে অভিযোগের তেমন কমতি নেই। শীতে এমন অভিযোগ শিথিল থাকলেও গরমকালে তা গরমই হয়ে থাকে। যেমনটি ফরিদগঞ্জে হয়েছে। এই অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত খুব একটা হতে দেখা যায় না। মিটার রিডারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের চেয়ে তাকে রক্ষা করার প্রয়াসটাই তাদের ঊর্ধ্বতনরা করে থাকেন। এতে অভিযোগ কমে না, আপসকামিতায় অভিযোগ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এমনটি কোনোভাবেই যথার্থ নয়।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের চেয়ে মিটার রিডারের বেশি ধনী হবার বহু নজির কিন্তু আছে। অনিয়ম করা ছাড়া কেউ এমন ধনী হতে পারে সেটা ভাবাই যায় না। মিটার রিডারই কেবল অনিয়ম করে সেটা ঢালাওভাবে বলা যায় না, কেননা কিছু অসাধু গ্রাহকই বিদ্যুৎ চুরি করার জন্যে মিটার রিডারকে নানা প্রলোভনে বিপথগামী করে। এজন্যে নিবিড় পর্যবেক্ষণে অসাধু গ্রাহক ও মিডার রিডার উভয়কে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার।