প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
১০ লাখ টাকা জরিমানা দিয়ে যদি আবার---

আমাদের সমাজে কিছু অপরাধী আছে, যারা জেল-জরিমানায় বেপরোয়া হয়ে যায়। কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রে কিছু কিশোরকে পাঠিয়ে তাদের আচরণ পরিবর্তনের প্রয়াস চালানো হয়। কিন্তু বয়স্কদের অপরাধ সংশোধন কেন্দ্র না থাকায় তাদের অনেকে জেল-জরিমানা ভুগেও সংশোধন হয় না। হাজীগঞ্জে শিশু খাদ্যে ভেজালের দায়ে আনাছ নামের এক ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েও আবার সে অপরাধ করে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কামরুজ্জামান টুটুল চাঁদপুর কণ্ঠে পরিবেশিত সংবাদে লিখেছেন, শিশু খাদ্যে কেমিক্যাল ও বিষাক্ত কাপড়ের রঙ মিশিয়ে বিক্রির দায়ে এক ব্যবসায়ীকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৪ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত চাঁদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারক মোঃ মোরশেদ আলম অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মোঃ আনাছের উপস্থিতিতে এই রায় দেন। তিনি হাজীগঞ্জ বাজারের স্বর্ণকার পট্টির হাজী আবু তাহের স্টোরের স্বত্বাধিকারী। আনাছ বহু বছর ধরে এই নিম্নমান ও ভেজাল শিশু খাদ্য বিক্রি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে এই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে স্যানিটারী পরিদর্শক চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্যানিটারি পরিদর্শক সামছুল আলম রমিজ নিয়মিত অভিযানে গিয়ে ওই ব্যবসায়ীর দোকানে শিশুদের খাদ্যে কেমিক্যাল ব্যবহার, বিষাক্ত কাপড়ের রঙ, চকলেট, আইচপপ, ললিপপ, ক্যান্ডি চকলেট, লিচু, রঙ মেশানো কাপ আচার, খেলনাযুক্ত শিশু খাদ্য ও লজেন্স এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যসামগ্রী পান। এরপর তিনি তার বিরুদ্ধে শিশু খাদ্য আইনে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর মামলাটি দায়ের করেন। স্যানিটারী পরিদর্শক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক সামছুল আলম রমিজ আরো জানান, ব্যবসায়ী আনাছ এসব অনুমোদনবিহীন কেমিক্যাল মিশ্রিত শিশু খাদ্যসমূহ উপজেলার বাজারগুলোর বিভিন্ন দোকানে পাইকারি দরে বিক্রি ও সরবরাহ করে থাকেন। যে কারণে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩-এর বিভিন্ন ধারায় মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয় আদালত। অপর এক প্রশ্নে সামছুল আলম রমিজ জানান, আদালতের রায়কৃত জরিমানার পুরো ১০লাখ টাকা জমা দিয়ে দেবার কারণে আনাছকে আদালত খালাস দেয় ও সতর্ক করে।
আমাদের জানা মতে, খাদ্যে ভেজালের দায়ে স্মরণকালে চাঁদপুরের কোনো ব্যবসায়ী কোনো অপরাধের জন্যে এতো টাকা জরিমানা দিয়ে খালাস পেলেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ আরো কিছু সংস্থা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান/ দোকানে অভিযান চালানোর পর সেগুলোর কোনো কোনোটি পূর্বের ন্যায় অপরাধে লিপ্ত হয়। দেখা গেছে, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে একবার অভিযান চালানোর পর বারবার সাধারণত অভিযান চালানো হয় না। শোনা গেছে, এরা অভিযান পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে নানা উপায়ে ম্যানেজ করে তাদের অপরাধ অব্যাহত রাখে। এমন বাস্তবতায় আমাদের প্রশ্ন, হাজীগঞ্জের ভেজাল শিশু খাদ্য বিক্রেতা মোঃ আনাছ বিপুল অঙ্কের জরিমানা দিয়ে আবার 'যথা পূর্বং তথা পরং' হয়ে যায় কি না। তার মধ্যে সংশোধন এসেছে কিনা, তার মতো হাজীগঞ্জের অন্য কোনো ব্যবসায়ী ভেজাল শিশু খাদ্যের ব্যবসা করে কি না সেটা পর্যবেক্ষণ করা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য সংস্থার দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।