প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
কৃষি কাজের নামে জমি লীজ, হয় বাণিজ্য

বাংলাদেশে সরকারি যে ক’টি সংস্থা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জায়গা অধিগ্রহণ করে পরে জনবলের অভাবে সংরক্ষণ করতে পারছে না কিংবা পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখছে, তার মধ্যে রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর নাম মুখে নিতেই হয়। চাঁদপুরে এই দুটি সংস্থার অপ্রয়োজনীয় জায়গা সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে কতো সংবাদ যে পরিবেশিত হয়েছে, তার হিসাব মিলানো কঠিন। গতকালও চাঁদপুর কণ্ঠে পরিবেশিত হয়েছে এমন একটি সংবাদ। যেটির শিরোনাম হয়েছে 'কৃষি জমির নামে অবৈধভাবে লিজ : নানুপুর স্লুইস গেইট এলাকায় গড়ে উঠেছে বালির ব্যবসা'।
সংবাদটিতে সোহাঈদ খান জিয়া লিখেছেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নানুপুর স্লুইস গেইট (চর বাগাদী পাম্প হাউস) এলাকায় অবৈধভাবে কাগজপত্র তৈরি করে কৃষি কাজের নামে ভুয়া লিজ নিয়ে বালির ব্যবসা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, নানুপুর স্লুইস গেইট এলাকার স্টাফ কোয়ার্টারের নিকট ডিএনসি বাজার সংলগ্ন স্থানে কৃষি কাজের জন্যে অবৈধভাবে হুমায়ুন কবির, খোরশেদ আলম ও ওমর ফারুক মিজির নামে লিজ নেয়া হয়। কিন্তু তারা কৃষি কাজে জায়গা ব্যবহার না করে গড়ে তোলেন বিশাল বালির ব্যবসা। দিন দিন দখল করে নেন আরো ২ একর জমি। এছাড়া আরো জমি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করে আসছেন। কিন্তু পাউবোর জায়গা লিজ বন্ধ থাকাবস্থায় জালজালিয়াতি করে ব্যাক ডেট দিয়ে এ লিজ নেয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। পাউবো অফিসের সাবেক কর্মকর্তা উত্তম কুমার অর্থের বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এ লিজ প্রদান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি জায়গা সরকারি কর্মকর্তাই ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে লিজ প্রদান করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রক্ষক হয়ে উত্তম কুমার ভক্ষকের ভূমিকা পালন করা কতোটুকু সঠিক হয়েছে।
ভুয়া লিজ গ্রহীতারা ১ একর সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে জায়গা দখল করলেও বর্তমানে তারা ৩ একরের উপর জমি ভোগদখল করে আসছেন। তারা বালির ব্যবসার পাশাপাশি নদীর তীরে ঘাট তৈরি করে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্টের ট্রলার ভিড়িয়ে ট্রাক দিয়ে মাল বিভিন্ন জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। সরকারি জমি এভাবে দখল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করার রহস্য কী--এমন কথা উঠেছে। মনে হচ্ছে, উত্তম কুমার অফিসের সকল কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই ভুয়া লিজটি প্রদান করে দিয়ে যান। এ নিয়ে ওই সময় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পাউবো কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ অবৈধ ও জাল-জালিয়াতির লিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, তাদেরকে বড় ধরনের অর্থ দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লিজ বন্ধ থাকাকালে তারা কীভাবে লিজ নিয়েছে? আমাদের জানা মতে, তারা অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে কাগজপত্র তৈরি করে লিজ নেয়। তাদের লিজ সঠিক নয়। এ বিষয়টির ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এ ব্যাপারে চাঁদপুর পওর বিভাগের সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা উত্তম কুমার সরকার মোবাইল ফোনে বলেন, এ ধরনের কাজ আমি করি নি। আমার মনে পড়ে না। তার স্থলাভিষিক্ত আমির হোসেন বলেন, কেউ অনিয়ম করে অবৈধভাবে ইজারা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণমাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য দিয়ে সাময়িক দায়সারা যেন সরকারি কিছু কর্মকর্তার স্বাভাবিক আচরণে পরিণত হয়েছে। তারা সংবাদের সত্যতার অনুকূলে কাজ না করে অনিয়মের আশ্রয়গ্রহণকারীদের কাছে উৎকোচের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে দরকষাকষি করেন বলে গুঞ্জন শোনা যায়। চাঁদপুর পাউবো’র পওর বিভাগের সহকারী রাজস্ব অফিসার আমির হোসেন এমনটি করবেন না বলে আমরা বিশ্বাস রাখছি। পাউবোর জায়গায় লিজবিহীন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, নির্মিত স্থাপনার অবৈধ ব্যবহার, বোরোপিট খালের ভোগদখল সংক্রান্ত অনিয়ম, পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত জায়গা লিজ ও ভোগদখলে যাবতীয় অনিয়ম ও দুর্বৃত্তপনা রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দ্রুত এগিয়ে আসা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে আমরা মনে করি। অন্যথায় পাউবোর ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবার আশঙ্কা থেকেই যাবে।