প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কাণ্ড প্রসঙ্গে

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীর ধিক্কারে জর্জরিত হয়েছেন। এমন ধিক্কারে কিছু নিরীহ ও ভালো অধ্যক্ষও যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জর্জরিত হন নি, কটু কথা শোনেন নি, সেটা হলফ করে বলার সুযোগ নেই। মানুষের ভুলো মন। পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনা মানুষ যখন ক্রমশ ভুলতে বসেছে, তখন আবার কোনো মাদ্রাসা অধ্যক্ষের কোনো অস্বাভাবিক কাণ্ডে মানুষের স্মৃতি জেগে উঠে এবং অকপটে কেউ কেউ বলে উঠেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কীভাবে এতোটা খারাপ হতে পারে! এমন একটি কাণ্ডের খবরই গত সোমবার চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে ছাপা হয়েছে।
‘নকল সরবরাহের দায়ে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের দুই বছরের কারাদণ্ড’ শিরোনামের সংবাদে চাঁদপুর কণ্ঠের শাহরাস্তি ব্যুরো ইনচার্জ মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল লিখেছেন, শাহরাস্তিতে স্মার্টফোনের মাধ্যমে অভিনব কায়দায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহের দায়ে রাজাপুরা আল-আমিন ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছায়েদুল ইসলামকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত। ৩ মার্চ শাহরাস্তি চিশতিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষায় ইংরেজি প্রথমপত্রের পরীক্ষা চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারি গাড়ি দূরে রেখে হেঁটে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ সময় কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থানরত অফিস সহকারী, আয়া এবং কিছু শিক্ষক ছোটাছুটি শুরু করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেন্দ্রে অনিয়ম ও নকলের বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরে শ্রেণিকক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের দেহ তল্লাশি করেন। পরে শ্রেণিকক্ষের বাইরে এবং পরীক্ষা কেন্দ্রের বাউন্ডারির মধ্যে অসংখ্য হাতে লিখে সমাধান করা প্রশ্নের উত্তর/নকল পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষকদের ইঙ্গিতে পরীক্ষার্থীরা নকল জানালা দিয়ে শ্রেণিকক্ষের বাইরে ফেলে দেয় বলে ধারণা করা হয়। এরপর হাতে লিখে সমাধান করা ফটোকপি করা নকল দেখে কেন্দ্রে উপস্থিত দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজাপুরা আল-আমিন ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ছায়েদুল ইসলাম (৫৩) পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রিন্টারে ২৫-৩০ কপি হাতে লিখা নকলের প্রিন্ট বের করেছেন। এই অধ্যক্ষকে পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি এক পর্যায়ে জানান, বাসায় তিনি মোবাইল ফোন রেখে এসেছেন। তার নম্বরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কল দিলে পাশের ব্যাগের মধ্যে মোবাইল ফোনটি বেজে উঠে। মোবাইল ফোনে প্যাটার্ন লক ছিল, তাকে প্যাটার্ন লকটি খুলতে বললে তিনি তাৎক্ষণাৎ মোবাইল থেকে কিছু একটা ডিলিট করে দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে তার মোবাইল ফোন তল্লাশি করে হোয়াটসঅ্যাপের মধ্যে শ্রেণিকক্ষের বাইরে উদ্ধারকৃত হাতে লেখা নকলের হুবহু ছবি পাওয়া যায়। তিনি জানান, তার এক ছাত্র এগুলো সমাধান করে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। পরে তিনি কেন্দ্রের প্রিন্টারে প্রিন্ট করে রুমে রুমে নকল সরবরাহ করেছেন। তিনি দোষ স্বীকার করায় পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০-এর ৯ (ক) ধারা মোতাবেক রাজাপুরা আল-আমিন ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ছায়েদুল ইসলাম (পিতা-মৃত সুন্দর আলী, গ্রাম-ভদ্রগাছা, উপজেলা-নবীনগর, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া)কে দুবছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইয়াসির আরাফত।
একজন মাদ্রাসা অধ্যক্ষের এমন কাণ্ডে শুধু চাঁদপুর জেলা নয়, পুরো দেশের পাঠকরাই বিস্মিত হয়েছেন। সাধারণত কোনো বিপথগামী শিক্ষক কারো প্রলোভনে-প্ররোচনায় নকল নিয়ে এতোটা জঘন্য কাজ করার প্রবণতায় ভুগতে পারেন। এটা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে দেখা যায়। কিন্তু কোনো অধ্যক্ষকে নির্লজ্জ ও বেপরোয়া হয়ে সেটা করতে দেখা যায় না। শাহরাস্তিতে অধ্যক্ষ ছায়েদুল সেটি করে পুণ্যভূমি শাহরাস্তিকে কলঙ্কিত করার প্রয়াস চালালেন। এটা দুঃখজনক, যেটা মেনে নিতে শাহরাস্তির সচেতন ব্যক্তিমাত্রেরই অনেক কষ্ট বোধ হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। আমরা মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে তার নৈতিকতা চর্চার বিষয়টি যাচাইয়ে নিয়োগ বোর্ডের নির্মোহ থাকাটাকে বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছি। এতে অনৈতিক কাজের জঘন্য রূপ অন্তত দেখা যাবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।