প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যদি তা-ই সত্য হয়-

‘জেলে চাল বিতরণে অনিয়ম ॥ হানারচর ইউপি কার্যালয়ে দুদকের হানা!’ শিরোনামে গত মঙ্গলবার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদটি অনেক পাঠককে ভাবিয়ে তুলেছে। জেলেদের চাল নিয়ে এই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)-এর চালবাজিতে অন্যান্য ইউপিও পড়বে আস্থার সঙ্কটে, যা থেকে উত্তরণ খুব সহজ নয়। অনেকের বিস্ময় জড়িত অভিব্যক্তি : জেলেদের চাল নিয়ে তাহলে এমনই হয়!
সংবাদটির বিবরণ হচ্ছে : চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৩নং হানারচর ইউনিয়নে জেলে চাল বিতরণকালে হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয় দুদকের একটি টিম। জেলে চাল বিতরণে চাল কম দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে দুদক সেখানে হানা দিয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল থেকেই এই ইউনিয়নে জেলে চাল বিতরণ শুরু হয়। বিতরণের এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মোঃ আজগর হোসেনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি টিম। এ সময় তারা প্রথমেই একাধিক চালের বস্তাসহ একটি ভ্যান আটক করেন। একে একে তারা বিভিন্ন জেলের সাথে কথা বলেন। এমনকি তারা জেলেদের দেয়া একাধিক চালের বস্তা ওজন দেন। তখন কয়েকটা বস্তায় চালের পরিমাণ কম পাওয়া যায়। এ সময় জেলে চাল বিতরণ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। তারা ইউপি চেয়ারম্যান সাত্তার রাঢ়ীর কাছে জেলের সংখ্যা ও চাল সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে চান এবং ভ্যানে থাকা একাধিক বস্তার কার্ডধারী জেলেকে আসতে বলেন। এক পর্যায়ে যখন ওই চালের কার্ডধারীরা আসেন, তখন তারা কে কী পেশায় আছে তা জানতে চান দুদকের কর্মকর্তারা। তখনই বাধে বিপত্তি। তাদের কেউ কেউ বলতে শোনা যায় : আমি মসজিদের মুয়াজ্জিন, আমি কৃষক বা অন্য পেশার লোক। এ সময় চাঁদপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মোঃ আজগর হোসেন বলেন, এখানে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ছিলো যে, ভুয়া কার্ড সৃষ্টি করে চাল দেয়া হচ্ছে। প্রকৃত যেসব জেলে রয়েছে তাদের কম চাল দেয়া হচ্ছে এবং তাদের চালগুলো অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা আজকে এখানে এসেছি। আমরা এসে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। একজন জেলে ৪০ কেজি করে চাল পাওয়ার কথা, কিন্তু ওনারা রেজুলেশন করে ৩৬.৮০ কেজি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আমরা ওজন দিয়ে পাই ৩১, ৩২ ও ৩৫ কেজি। আজকে আমরা এখানে যা পেয়েছি তা কমিশনে রিপোর্ট আকারে পাঠিয়ে দিবো।
হানারচর ইউনিয়ন পরিষদে হানা দিয়ে দুদক কর্মকর্তাগণ জেলেদের পাশাপাশি অন্য পেশার লোকজনকে ভুয়া কার্ড দিয়ে চাল দেয়া এবং ওজনে কম চাল দেয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন, তা অস্বীকার করার কোনো জো নেই ইউপি চেয়ারম্যান/মেম্বারদের। যে কারণে তারা প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারেন নি। কথা হলো, ট্যাগ অফিসার উপস্থিত থাকার পরও চেয়ারম্যান/ মেম্বাররা জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম করার সুযোগ পান কীভাবে? নিশ্চয়ই ভালো অঙ্কের বেতন-পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা ভালো ঘুষ খেয়ে চুপসে থাকেন। এমনটি যে হানারচর ইউপি ছাড়া অন্য কিছু ইউপিতে হয় না, সেটা হলফ করে কেউ কি বলতে পারবেন?
জেলেদের চাল বিতরণেই যে অনিয়ম হয় তেমনটিই নয়, বিকল্প কর্মসংস্থানে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণেও অনিয়ম হয়। চাঁদপুরের এক সাবেক জেলা প্রশাসক এমন অনিয়ম হাতেনাতে ধরে জেলেদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সে উদ্যোগও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় নি মৎস্য বিভাগ ও কিছু ইউপির অসহযোগিতার কারণে এবং প্রভাবশালীদের অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে। এ সকল ক্ষেত্রে সরষের ভূত তাড়ানোই যাচ্ছে না। এখন দেখার অপেক্ষা, দুদকের ধারাবাহিক হানায় এই ভূত শেষ পর্যন্ত তাড়ানো যায় কিনা।