প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
এমন মৃত্যু মেনে নিতে অনেক কষ্ট

ফরিদগঞ্জ লাইফ জেনারেল হাসপাতালে টনসিল অপারেশন আর হলো না মুক্তার। অ্যানেস্থেসিয়ায় হার্ট ব্লক হয়ে করুণ মৃত্যু ঘটেছে তার। চাঁদপুর কণ্ঠে গত রোববার এই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, গলা ব্যথা নিয়ে দেড় বছরের শিশু সন্তানের জননী প্রবাসীর স্ত্রী কুলসুমা আক্তার মুক্তা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তার অপারেশন করার জন্যে অপারেশন থিয়েটারেও নিয়ে যায়। কিন্তু কুলসুমা আক্তারের আর জ্ঞান ফিরেনি। তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করলেও সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার শিকার ওই নারীর বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রূপসা এলাকায়। ঘটনাটি ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার রাতে ঘটে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, অ্যানেস্থিসিয়ার কারণে হার্ট ব্লক হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে গলা ব্যথা নিয়ে উপজেলা সদরের লাইফ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন রূপসা উত্তর ইউনিয়নের পশ্চিম রূপসা গ্রামের মেম্বার বাড়ির প্রবাসী আল-আমিনের স্ত্রী কুলসুমা আক্তার মুক্তা (২২)। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক মুক্তাকে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন। নিয়ম অনুযায়ী রাত আনুমানিক ৮টার দিকে মুক্তাকে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। ১ঘন্টা পর মুক্তার শাশুড়ি আলেয়া বেগমকে জানানো হয়, তার পুত্রবুধূ অসুস্থ, তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে চিকিৎসক রেফার করেছেন। তিনি উপায়ন্তর না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া অ্যাম্বুলেন্সে করেই চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নেয়ার পর কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃতের শাশুড়ি আলেয়া বেগম জানান, আমার ছেলের স্ত্রীর গলায় টনসিল ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি ওই এলাকার দালাল কামালের মাধ্যমে। তারা রাত আটটায় অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পর ডাক্তার বলেছেন ১৫-২০ মিনিট সময় লাগবে। ১ ঘন্টা পর ৯টার দিকে আমাকে ডেকে বলেছেন, আপনার ছেলের স্ত্রীর জ্ঞান ফিরছে না। তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। পরে তড়িঘড়ি করে আমার নাতিকে দিয়েই চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা ইসিজি করার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন জানান, সুস্থ সবল মানুষ লাইফ জেনারেল হাসপাতালে টনসিল অপারেশন করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছেন। রূপসা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম সুমন জানান, মুক্তা আক্তারের মৃত্যুর খবর শুনে আমার কাছে ক’জন এসেছিল। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছে সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে। পরে এলাকার ক’জন লাশটি বাড়িতে নিয়ে এসেছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে অ্যানেস্থিসিয়া দেয়া ডাঃ শাহ আলম রিপনের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। লাইফ জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ পরেশ চন্দ্র পাল বলেন, হাসপাতালে রোগীকে অজ্ঞান করার জন্যে ডাঃ শাহ আলম রিপনকে নিয়ে আসা হয়। অজ্ঞান করার তিনটি ইনজেকশনের মধ্যে দুটি করা হয়েছে। এই ইনজেকশন তার শরীরে সাপোর্ট করে নাই, তাই তার হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। পরে তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে হাসপাতালের এমডি ওই পরিবারের সাথে কথা বলেছেন।
ফরিদগঞ্জের লাইফ জেনারেল হাসপাতালে টনসিলের মতো ছোটখাট অপারেশনের জন্যে মুক্তার মতো একজন গৃহবধূর মৃত্যু কোনো যুক্তিতেই মেনে নেয়া যায় না। এই মৃত্যুটি অনেক বেশি করুণ, যার কষ্ট তার দুগ্ধপোষ্য শিশু সন্তানসহ পুরো পরিবারের জন্যে যেমন, সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষের জন্যেও তেমন। আমাদের মতে, মুক্তা নামের রোগীটির টনসিলের কষ্ট নিরসনের চেয়ে দালালের লাভের স্বার্থে তার চাহিদা পূরণে তাড়াহুড়ো করে অপারেশন করতে যাওয়ার কারণেই ঘটেছে রোগীর মৃত্যুর মতো চরম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি।
আমাদের পর্যবেক্ষণে চাঁদপুর জেলায় বেসরকারিভাবে পরিচালিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে সুদৃশ্য ভবন সম্বলিত একটি হাসপাতালই হচ্ছে এই লাইফ জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালাবার ঘাটতি আছে বলে লোকমুখে শোনা যায় এবং সুস্পষ্ট অভিযোগও পাওয়া যায়। ফরিদগঞ্জের সংবাদপত্র এজেন্ট মাওলানা তাজুল ইসলামের মেধাবী সন্তান এই হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকের অবহেলায় প্রাণ হারাবার অভিযোগ রয়েছে। এটা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বারবার লিখা হয়েছে। কিন্তু কিছুই হয় নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অদৃশ্য খুঁটির জোরে।
বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অনেক ছোট-বড় হাসপাতালে সাঁড়াশি অভিযান চললেও ফরিদগঞ্জ লাইফ জেনারেল হাসপাতাল সহ দেশের অনেক ভালো অবকাঠামোর অর্থাৎ ভালো চেহারার হাসপাতালে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান এই সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত চালানো হয় নি, যেটা নিঃসন্দেহে প্রশ্নবোধক। তিক্ত হলেও এটা সত্য যে, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সাম্যতা রক্ষা না করার অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতা একসময় মাঠে মারা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।