প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ভুয়া/ভেজাল উপজেলা সদরে অবস্থান করে কিসের জোরে?

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুয়া/ভেজাল মিশে গেছে জনারণ্যে অনেকটা নির্বিঘ্নে। ভুয়া/ভেজাল জনাকীর্ণতায় যেন নিরাপদ অস্তিত্ব খোঁজে। কথা হলো, সেটা কিসের জোরে? তদারককারী সংস্থার সাধারণ উদাসীনতা, অর্থপূর্ণ নীরবতা, না অন্য কারণ এর পেছনে রয়েছে, সেটা নিয়ে ভাবতে গেলে কপালে ভাঁজ পড়ে। খোদ উপজেলা সদরে বারবার ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান এবং ভেজাল সামগ্রী প্রাপ্তিতে এমন প্রশ্ন বা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
‘শাহরাস্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়েছে ভুয়া ডাক্তার মোতাহের’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, শাহরাস্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান টের পেয়ে পালিয়েছে ভুয়া ডাক্তার এসএম মোতাহের হোসেন। ওই সময় পৌরসভার মেহের কালীবাড়িস্থ হোসাইন ফার্মেসিতে গিয়ে তালাবদ্ধ দেখতে পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরী এ অভিযান পরিচালনা করেন। জানা যায়, মেহের কালীবাড়ির হোসাইন ফার্মেসিতে নিজেকে চর্ম, যৌন, মেডিসিন, মা ও শিশুরোগে অভিজ্ঞ ডাক্তার পরিচয় দিয়ে এসএম মোতাহের হোসেন বিভিন্ন রোগীকে চিকিৎসা দিতেন। ডাক্তার না হয়েও তিনি কমিশনের লোভে প্রয়োজন ছাড়াই অনেক রোগীকে টেস্ট দিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তার অবহেলার কারণে বেশ ক’জন রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়। ভুয়া চিকিৎসার বিভিন্ন ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার কথিত ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে শাহরাস্তি থানাসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বুধবার দুপুরে অভিযানে গেলে ভুয়া ডাক্তার এসএম মোতাহের হোসেন ও তার ভাই হোসাইন ফার্মেসির মালিক এসএম মোকাদ্দাস হোসেন ফার্মেসি বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এরপর আদালত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসিতে অভিযান চালায়। ওই সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ও স্যাম্পল রাখার দায়ে আল মদিনা ফার্মেসিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, মেহের কালীবাড়ির হোসাইন ফার্মেসিতে ভুয়া ডাক্তার মোতাহের হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। ভুয়া ডাক্তার মোতাহের বিভিন্ন রোগীকে টেস্ট করাতেন। তারা সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে উল্টো অর্থ খরচ করে অন্য জায়গায় চিকিৎসা নেয়া লাগতো। এমন অভিযোগের জন্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত তার প্রতিষ্ঠানে গেলে সেখানে তালাবদ্ধ দেখতে পাওয়া যায়। তাকে মৌখিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে জরুরিভাবে দেখা করার নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি আমরা আল মদিনা ফার্মেসিতেও অভিযান পরিচালনা করি। উক্ত ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়ায় তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরী জানান, শাস্তি দিতে নয়, ভবিষ্যতে সংশোধনের লক্ষ্যে এ দণ্ড দেয়া হয়েছে।
আমাদের দেশের নূতন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যখাতের যাবতীয় অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। সে কারণে প্রায়শই মোবাইল কোর্টসহ নানা তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। অতীতের সাথে তুলনা করলে এমন তৎপরতাকে কখনও কখনও আশাব্যঞ্জক মনে হয়। এমন তৎপরতায় ভুয়া ডাক্তার, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ, অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালসহ যা অনিয়ম বেরিয়ে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে এসব খোদ উপজেলা সদরের জনাকীর্ণতায় চিহ্নিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই কথা উঠেছে, এসব কার প্রশ্রয়ে, কিসের জোরে অবস্থান করার সুযোগ পাচ্ছে। এটা কি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাঠ পর্যায়ে তদারকিসহ দায়িত্ব পালনে গাফলতি না অন্য কারণে সেটা নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে। নূতন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোচ্চার বলে এখন অনিয়ম বিরোধী অভিযান জোরদার, তিনি দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরালে উপজেলা, এমনকি জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সকলে যে নির্বিকার হবে না, তার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে বলে হয় না।