রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

‘জিরো টলারেন্স’, তবুও অনিয়ন্ত্রিত মাদক

অনলাইন ডেস্ক

মাদকের ব্যাপারে আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের প্রায় সকলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করার মুখরোচক ঘোষণা সুযোগ পেলেই দিয়ে দেন। এমন ঘোষণায় তাৎক্ষণিক বাহবাও কুড়ান। কিন্তু বাস্তবতায় যা দেখা যায়, তার একটি নমুনা সংবাদ হচ্ছে নিম্নরূপ। চাঁদপুর কণ্ঠে ‘বাগাদীতে মাদক ব্যবসা জমজমাট’ শিরোনামের এই সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদী, রামচন্দ্রপুর, হাজরা, নানুপুর, ঘাসিপুর ও চরমেয়াশা গ্রামে মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কিছু মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে থাকে। এরা দিন-রাত মাদক বিক্রিতে ব্যস্ত থাকে। তাদের মাদক বিক্রির বিষয়টি এলাকার সচেতন মহল জানলেও ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি। এলাকার উঠতি বয়সী যুবকরা মাদকের দিকে দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়েছে। পশ্চিম সকদী গ্রামে বহু পূর্ব হতে মাদক বিক্রি হয়ে আসছে। প্রশাসন মাদকসহ একাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকসহ আটক করে নিয়ে যায়। ৩ মাস বা ৬ মাস পর জেল থেকে বের হয়ে পুনরায় তারা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। রামচন্দ্রপুর গ্রামে নতুন করে মাদক ব্যবসা চলে আসছে। একটি সূত্র জানায়, এলাকার ক’জন প্রভাবশালী এসব মাদক ব্যবসায়ীকে অর্থ দিয়ে আবার মাদক এনে দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী আটক হলেও তারা পরবর্তীতে এলাকায় বুক ফুলিয়ে চলে। এমনকি পুনরায় মাদক ব্যবসা শুরু করে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচেতন লোকজন জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা এতো বেপরোয়া যে, কেউ ভয়ে মুখ খুলে কথা বলতে সাহস পায় না। এদেরকে এখনই নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। না হলে এসব এলাকা পূর্বের ন্যায় মাদকের স্বর্গে পরিণত হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।

বলা দরকার, যে কোনো জেলায় নূতন এসপি, কোনো থানায় নূতন ওসি যোগদান করলেই এবং কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে গণমাধ্যমকে যে কমন কথাটি বলে থাকেন সেটি হচ্ছে, মাদকের বিরুদ্ধে তার অবস্থান হবে ‘জিরো টলারেন্স’। কিন্তু এমন ঘোষণার পরও বাগাদীর মতো শহরতলীতে মাদকের ভয়াবহ অবস্থা দেখে ‘জিরো টলারেন্স’ শব্দ দুটির সদ্ব্যবহারের পরিবর্তে অপব্যবহারের বিষয়টিই কেবল স্পষ্ট হয়। এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলে পুলিশ বলবে জনবল সঙ্কটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কথা। কিন্তু‘জিরো টলারেন্স’ সংক্রান্ত ঘোষণার প্রাক্কালে এই সীমাবদ্ধতার কথা কারো মনে থাকে না। আর জনপ্রতিনিধি জিজ্ঞাসিত হলে দোষ দেবে জনগণের। তিনি বলবেন, জনগণের সহযোগিতার অভাবে আমার ঘোষণা কার্যকর করতে পারছি না।

আমাদের মতে, মাদকের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বললে এমনটা বলা উচিত যে, আমরা এলাকার সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণে মাদক প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থাগ্রহণ করবো এবং ক্রমান্বয়ে আমাদের অবস্থানকে ‘জিরো টলারেন্স’ উন্নীত করবো। কিন্তু এমনভাবে না বলে সরাসরি ‘জিরো টলারেন্স’ বলে স্বল্প/বেশি সময়ান্তরে সমালোচনার পাত্রে পরিণত হন ঘোষণা প্রদানকারী মাত্রই। বস্তুত মাদকের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিতভাবে ধারাবাহিক সর্বাত্মক সচেতনতা গড়া ছাড়া মাদক নির্মূল দূরে থাক, প্রত্যাশিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণও করা যায় না। কিন্তু সচেতনতা সৃষ্টির ধারাবাহিক কাজকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সকলে কঠিন মনে করে এবং সেটা এড়িয়ে চলে আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ বেশি করে আইওয়াশে মনোযোগী হয়। এতে সেটি গণমাধ্যমের ভালো উপজীব্য হয়, তবে মাদক কমে না, নিয়ন্ত্রণ হয় না, আর নির্মূলের বিষয়টি বরাবরের মতোই থাকে সুদূরপরাহত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়