রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

হায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!

অনলাইন ডেস্ক
হায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!

সরকার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশেষ করে কিন্ডাগার্টেনগুলোর টুঁটি চেপে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্যে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়তি চাপে আছেন। আরো চাপে আছেন শিক্ষক নেতাদেরও। সবচে’ বড় মানসিক চাপে থাকেন ‘এটিইও’ নামে বহুল পরিচিত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এইউইও)গণ, যারা বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকের গরহাজিরা ও নানা অনিয়ম দেখে ২০ টাকা থেকে শুরু করে নানা অঙ্কের ঘুষ খেয়ে চুপসে যান। এই চুপসে যাওয়া তথা প্রশ্রয়ে কিছু বিদ্যালয়ে বেতনভোগী/বেতনলোভী শিক্ষকই কেবল ঠিক থাকে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি) বা পরিচালনা পর্ষদও বহাল তবিয়তে টিকে থাকে, তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা ঠিক থাকে না। এমতাবস্থায় পাঠদানের নামে কী হয় সেটা আন্দাজ করতে কারো কষ্ট হয় না। খোদ চাঁদপুর শহর ও শহরতলীতে এমন বিদ্যালয় আছে, আর প্রত্যন্ত এলাকায় তো আছেই। এমন একটি বিদ্যালয় নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ছাপা হয়েছে একটি সংবাদ। যার ‘পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের অবহেলায় বন্ধ হওয়ার পথে বিদ্যালয়টি ॥ কচুয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তিতে চেয়ারম্যানের পারিবারিক বাগান ॥ প্রধান শিক্ষকসহ ৫ জনকে শোকজ’ শিরোনামটি পড়লেই বিদ্যালয়টির দুরবস্থা আন্দাজ করা যায়।

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, কচুয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে পারিবারিক বাগান করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সওদাগর। তিনি কচুয়া উপজেলার ৯নং কড়ইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় মাঠের উত্তর পাশেই একটি বাগানে সাঁটানো রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নাম ও ছবি সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড। তিনি সম্পত্তিটি তার দখলীয় বলে নিজের নাম, পদবী ও ছবি দিয়ে দখলীয় স্বত্বের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে রেখেছেন। পাঠদান চলাকালীন বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণিতে ৭জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৮জন ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৩জন শিক্ষার্থী উপস্থিত দেখতে পাওয়া যায়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তি দখলের সত্যতা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার বলেন, উপজেলার ১৫১নং লুন্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩ শতক সম্পত্তির মধ্যে ২৪ শতক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। বাকি ৯ শতক সম্পত্তিতে ওই এলাকার বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সওদাগর পারিবারিক বাগান তৈরি করে দখলে রেখেছেন। স্থানীয়রা জানান, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাতিজা। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পারিবারিকভাবে ও প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তারের যোগসাজশে সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। পরিচালনা পর্ষদের অবহেলার কারণে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। এখানে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। শিক্ষকদের সঠিক তদারকির অভাব ও শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হওয়ার কারণে ক্রমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে ৩০-৩২ সংখ্যায় এসে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক পারভীন আক্তার নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। মাঝেমধ্যে আসলেও স্বল্পসময় অবস্থান করে উপজেলায় মিটিং আছে বলে স্বাক্ষর দিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, পার্শ্ববর্তী গ্রামে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি। তিনি সবসময় দাপট খাটিয়ে চলেন। তার ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারি না। এছাড়া তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। তার অবহেলার কারণেই বিদ্যালয়ের সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্পত্তিতে পারিবারিক বাগান তৈরির সত্যতা স্বীকার করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সওদাগর এই প্রতিবেদককে জানান, আমি পরিত্যক্ত জায়গায় ফলফলাদি গাছের বাগান করেছি। আপনারা বললে আমি গাছ কেটে ফেলবো। স্কুলের কোনো জায়গা আমি দখল করিনি।বিদ্যালয়ের সম্পত্তি বেদখল ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র জানান, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি বেদখলে থাকার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক কিংবা অন্য কেউ আমাদের অবহিত করেন নি। এইমাত্র আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের বারংবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ ৫ সহকারী শিক্ষককে বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত না থাকার কারণে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, সার্ভেয়ার নিয়োগ করে অচিরেই বিদ্যালয়ের সম্পত্তি নির্ধারণ করা হবে।

কচুয়ার ১৫১ নং লুন্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে ৩২ জন কিংবা ততোধিক শিক্ষার্থী থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় অনেক কম শিক্ষার্থী। তখন প্রত্যক্ষদর্শী মাত্রই ‘হায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!’ বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ সহ আরো অনেক কিছু বলার অবকাশ তৈরি হয়ে যায়। সেই অবকাশ থেকেই চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলো সংবাদ। আমরা আশা করি সংবাদটি ইতিমধ্যে অনেকের টনক নড়িয়েছে এবং সেমতে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গৃহীত হবে। অন্যথায় পাঁচ শিক্ষককে মাসিক লক্ষাধিক টাকা বেতন-ভাতা দিয়ে ৩২ শিক্ষার্থীর মাথাপিছু তিন সহস্রাধিক টাকা ব্যয়কে নিতান্তই অপচয় বলে গণ্য করতে হবে। এমতাবস্থায় এসএমসি বাতিল ও শিক্ষকদের বদলি বা শাস্তি দিয়েও যদি কাজ না হয়, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী না বাড়ে, তাহলে লুন্তি থেকে এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীবহুল অন্য কোনো এলাকায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া গ্রহণের যৌক্তিকতা তৈরি হয়ে যাবে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখার জোর দাবি জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়