প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যেখানে ট্রাক্টরের দাপট সড়কে শুধু নয়, প্রশাসনেও!

২০১৭ সালের পর চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার যখন সড়কে ট্রাক্টরের অবৈধ চলাচল নিষিদ্ধ করেন, তখন জেলার ফরিদগঞ্জ ছাড়া অন্য সকল উপজেলায় বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে নেয়া হয়। ফরিদগঞ্জের তৎকালীন এমপি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এই নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক ও উন্নয়নের প্রতিবন্ধক হিসেবে মন্তব্য করায় ফরিদগঞ্জে ট্রাক্টর চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ফলে ট্রাক্টরের দানব ও ঘাতকরূপী তাণ্ডব জেলার সকল উপজেলায় প্রায় বন্ধ হয়ে আসলেও ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ কিংবা ট্রাফিক পুলিশ ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সড়কে ট্রাক্টর বন্ধে কঠোর হতে পারে নি। অথচ অন্যান্য উপজেলায় ট্রাক্টর দেখামাত্রই পুলিশ আটক করেছে কিংবা পুলিশ সুপার স্বয়ং গজাল দিয়ে ট্রাক্টরের চাকা ফুটো করে বিকল করে দিয়েছে। ফরিদগঞ্জে ট্রাক্টরের অবৈধ চলাচলে ব্যবস্থাগ্রহণের ক্ষেত্রে সেই শৈথিল্য অদ্যাবধি রয়েই গেছে। ফলে ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য ও দাপট সেখানে কমা তো দূরের কথা, বরং বেড়েই চলছে।
চাঁদপুর কণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার সোহাঈদ খান জিয়া ফরিদগঞ্জে ট্রাক্টরের দাপট নিয়ে গত শনিবার একটি সচিত্র সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যেটি ব্যানার হেডিং দিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়। সংবাদটিতে তিনি লিখেছেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অবৈধ ট্রাক্টরের দাপটে নষ্ট হচ্ছে সড়ক, আর প্রাণ হারাচ্ছে বহু তরতাজা প্রাণ। যন্ত্রদানব ট্রাক্টরগুলো রাস্তায় চলাচলের সময় কখন যে কার উপর গিয়ে উঠে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফরিদগঞ্জ উপজেলাসহ সারাদেশে বহুসংখ্যক মানুষ অবৈধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে প্রতিনিয়ত মারা যায়। কৃষি জমি চাষাবাদে ফরিদগঞ্জে আবির্ভাব হয় ট্রাক্টরের। কিন্তু জমি চাষাবাদে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চাষাবাদের জমি বাদ দিয়ে চলে আসে সড়কে। এসব ট্রাক্টর শহর ও গ্রামাঞ্চলের সড়কে চলাচল করতে গিয়ে বহু তরতাজা প্রাণ কেড়ে নিয়ে গেছে। এমনকি সড়ক ধ্বংস করে ফেলেছে। এসব ট্রাক্টর সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাঘাট নষ্ট করেছে। বেপরোয়া গতিতে চলাচলকারী ট্রাক্টরের কারণে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে শব্দ দূষণ দেখা দেয়াসহ ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। ইট ভাটাগুলো পূর্ণোদ্যমে উৎপাদনে আসার ফলে ট্রাক্টরগুলোর চাহিদা বছরের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অত্যধিক। আর সে সুযোগেই তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এখানকার সড়কগুলোতে। তাদের বেপরোয়া গতির কারণে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে জনমনে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে জীবনহানির মত মারাত্মক দুর্ঘটনা। প্রতিদিন ভোর হতে শুরু হয়ে যায় ট্রাক্টরের দৌরাত্ম্য।
ফরিদগঞ্জে ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে অতিষ্ঠ এখানকার জনজীবন। উপজেলাবাসীর আশঙ্কা ট্রাক্টরগুলোর অবাধ চলাচল অব্যাহত থাকলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলো বেহাল অবস্থায় পতিত হবে। মোঃ হুমায়ুন, সাইফুল, মিজান বলেন, ট্রাক্টর চলা বন্ধকালীন সময়ে অনেকটা নির্বিঘ্নে পথচারীরা চলাফেরা করতো। ছাত্র-ছাত্রীরা নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করতো। ট্রাক্টর চলাচল করার কারণে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন। এসব ট্রাক্টর চালকদের নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স। ক’দিন পুরানো চালকদের সঙ্গে থেকে তারা চালকে পরিণত হয়। এরপরই তারা চলে আসে ট্রাক্টর চালনায়। সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদগঞ্জের পূর্বাঞ্চলে ইট ভাটা ও ইট ব্যবসা এবং পশ্চিমাঞ্চল বালু ব্যবসা জমজমাট হওয়ায় উপজেলার সর্বত্র ট্রাক্টরগুলো অবাধে চলাচল করে। আস্টা-গল্লাক, কামতাণ্ডগল্লাক, ফরিদগঞ্জ-গাজীপুর-চান্দ্রা, ফরিদগঞ্জ-রূপসা-খাজুরিয়া, ফরিদগঞ্জ-কালিরবাজার, ফরিদগঞ্জ-ধানুয়া-বাঘড়া বাজার সড়কে যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের বিচরণ বেশি। ফলে এ সড়কগুলোর অবস্থা বছরের বেশিরভাগ সময়ই জরাজীর্ণ থাকে এবং সড়ক দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ হলে দুর্ঘটনার হার অনেকটাই কমে আসতো। বছরে যে ক’টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, তার সিংহভাগই ট্রাক্টরের কারণে। ট্রাক্টরগুলো বিভিন্ন হাট-বাজারের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় ভয়ে আতঙ্কিত হতে হয় সাধারণ পথচারীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাক্টরগুলো যাতে স্থায়ীভাবে সড়কে চলাচল বন্ধ হতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সচেতন মহলের দাবি।
ফরিদগঞ্জে ট্রাক্টরের দাপট ও দৌরাত্ম্য বন্ধে সচেতন মহলসহ ভুক্তভোগীদের দাবিটি দীর্ঘদিনের হলেও সেটি দৃষ্টিগোচর ও কর্ণগোচর হচ্ছে না কারোই। এক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ ও রহস্যজনকভাবেই সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ নীরব। কিসের প্রচ্ছন্ন প্রভাবে যেন কুম্ভকর্ণের ঘুম পেয়ে বসেছে অনেককে। এ ঘুম ভাঙ্গাবে কে? একের পর এক গণমাধ্যমের সংবাদেও চেতনা জাগ্রত হচ্ছে না দায়িত্বশীলদের। কথা হলো, ফরিদগঞ্জের সড়কসমূহে ট্রাক্টরের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ও ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহণের কাজটি কি খুবই কঠিন? কে দেবে এই প্রশ্নের জবাব?