প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
নূতন মসজিদ নির্মাণে ঘুষ!
ঘুষ বা ঘুস শব্দটি বিশেষ্য পদ। এর আভিধানিক অর্থ উৎকোচ, গোপনে দেয় অবৈধ পারিতোষিক। সহজভাবে বললে বলতে হয়, কোনো কাজে সাহায্য লাভের জন্যে বা কার্যসিদ্ধির জন্যে গোপনে দেয়ার পুরস্কার বা অর্থই হচ্ছে ঘুষ। ঘুষ সম্পর্কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বলেছেন অর্থাৎ পবিত্র হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, ঘুষদাতা ও ঘুষখোর উভয়ই দোজখের আগুনে জ্বলবে। এ হাদিসটি মুসলমান মাত্রই জানেন। তারপরও মুসলিম-অমুসলিম অনেকেই এ হাদিসকে অবজ্ঞা করে ঘুষ দিচ্ছে ও ঘুষ খাচ্ছে। ব্যতিক্রমও আছে। চাঁদপুর জেলারই এক ভদ্রলোক সত্তরের দশকে সৌদি আরবের সরকারি একটি বিভাগে মাসিক এক লাখ টাকা বেতনে চাকুরি পান। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হলেও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। জবাবে ধর্মভীরু লোকটি বলেছিলেন, আমি ১টাকা ঘুষ দিয়েও নবীর দেশ সৌদি আরবে যাবো না। বেশি টাকা রোজগারের জন্যে ঘুষদাতা হিসেবে দোজখের লাকড়ি হতে চাই না। তার এমন কথাতেও নড়েচড়ে বসেনি ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়া ব্যক্তিটিকে ঘুষের বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন, প্রথম হওয়া ব্যক্তিটিকে আর পাঠাননি। তিনি দেশে সততার সাথেই তার সরকারি চাকুরি জীবন শেষ করেছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করেছেন।
|আরো খবর
ঘুষের ব্যাপারে ইসলাম ধর্মের অনুসারী খোদাভীরু ব্যক্তিমাত্রই উপরোক্ত হাদিসের আলোকে নিরাপোষ থাকাটা স্বাভাবিক। এমন স্বাভাবিকত্বের মধ্যে যদি কোনো মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, সুপার, কোনো শিক্ষক, কোনো মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন, খাদেম, মসজিদ কমিটির সভাপতি সহ অন্যান্য সদস্য যাদেরকে খোদাভীরু হিসেবেই জানেন সকলে, তারা ঘুষ প্রদান করে কোথাও থেকে কোনো সুবিধা আদায়ের প্রয়াস চালান, তাহলে বিস্ময় প্রকাশ করা ছাড়া উপায় থাকে না। এমন একটি বিস্ময়কর ঘটনাই ঘটেছে ফরিদগঞ্জে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পশ্চিম বিশকাটালি গ্রামের জিন্নাত আলী ভুঁইয়া বাড়ি জামে মসজিদ, নূতনভাবে নির্মাণ করতে গিয়ে মসজিদ কমিটি ‘কাতার চ্যারিটি’ নামক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারকে সাড়ে চার লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন, যাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পৌঁছে দেন। সেই ঠিকাদারের কথায় মসজিদ কমিটি মোটামুটি ভালো মসজিদটিকে নিজেদের ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ভেঙ্গে নূতন মসজিদ তৈরির জন্যে জায়গা ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করায় মসজিদ কমিটি বাধা দেয়, যার ফলে কাজ বন্ধ রয়েছে এবং মসজিদের মুসল্লিরা নামাজ আদায়ে বিপাকে পড়েছে। এ ব্যাপারে প্রকল্প ইনচার্জ জসিম উদ্দিন ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু না বলে ঠিকাদারের নিয়োগ বাতিল ও প্রকল্প বন্ধ করার কথা বলেন। যাতে ভিন্ন কিছুর আলামত টের পাওয়া যায়।
মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোর ধনাঢ্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মসজিদ, মাদ্রাসা তথা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অনুদান দিয়ে থাকেন। কাতার চ্যারিটি তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ইনচার্জ ও ঠিকাদার নৈতিকতার প্রশ্নে কতোটা প্রশ্নবিদ্ধ সেটা ফরিদগঞ্জের বিশকাটালি গ্রামের একটি মসজিদ নির্মাণ প্রক্রিয়া দেখেই আন্দাজ করা যায়। সবচে’ বড় কথা, মসজিদ কমিটির লোকজন যদি ঘুষদাতা হয়ে যায়, তাহলে তারাও কি প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন?