প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা প্রসঙ্গে

আমাদের দেশে বড়ো বড়ো দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে নানান কথা আছে। কোনো শাখার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের জন্যে সম্মেলন করা এবং নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়টি প্রত্যাশিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে প্রত্যাশা পূরণ হয় না। তিন মাসের জন্যে ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি বহাল থাকে বছরের পর বছর। ঘোষণা প্রদানকারী নেতাদেরকে নানান উপায়ে সন্তুষ্ট করতে পারলেই হলো, সম্মেলন ছাড়াই আহ্বায়ক কমিটি নিয়মিত কমিটি হয়ে যায়। আবার দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যানারে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন/ত্রিবার্ষিক সম্মেলন লিখা হলেও বাস্তবে সম্মেলন ২/৩ বছর পর তো নয়ই, পাঁচ থেকে দশ বছর পর, এমনকি তারচে’ বেশি সময় পরেও হয়। সম্মেলনের আগে বর্ধিত সভা হলেও সে সভার সিদ্ধান্ত রেজিস্টারে বড়োজোর লিখা থাকে, বাস্তবে এর যথার্থ প্রতিফলন দেখা যায় না। শাসক দল থেকে বিরোধী দল, বলা যায় বড়ো দলের শাখাসমূহের কমিটিকেন্দ্রিক নানা অনিয়ম দেখা যাবেই।
এই অনিয়ম নিয়ে কখনও কথা হয়, প্রতিবাদ হয়। এর পরিণামও ভুগতে হয় কাউকে কাউকে। কেন্দ্রীয় নেতাকে খেপিয়ে প্রতিবাদকারীকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়। নিশ্চিত পরিণাম/পরিণতি জেনেও অনেকে সাহস করে কথা বলেন, উচ্চকণ্ঠে পরিবেশ উত্তপ্ত করেন। ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার এমনটি করেছেন চাঁদপুর সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দ, যারা জেলা ও সদর উপজেলার কমিটি নিয়ে কথা বলেছেন। এ ব্যাপারে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দের প্রতিবাদ সভা : মেয়াদোত্তীর্ণ চাঁদপুর সদর উপজেলা ও জেলা যুবদল কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি’। ২৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়কবৃন্দ প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়ে যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান। বিবৃতিদাতারা হলেন : সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ জহিরুল ইসলাম, মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, মোঃ জিয়াউর রহমান টিটু, মোঃ জুলহাস আহমেদ জুয়েল, মোঃ হাসান আল রিয়াদ ও মোঃ মহসিন খান। উল্লেখ্য, তারা অনেকেই জেলা যুবদলের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন।
প্রতিবাদ সভায় লিখিত বিবৃতিতে উল্লেখিত নেতৃবৃন্দ বলেন, চাঁদপুর সদর উপজেলা যুবদলের অন্তর্গত ১৪টি ইউনিয়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বর্তমান দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান নজু এবং সদ্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক মান্নান খান কাজল আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে ত্যাগী ও যোগ্য সংগঠকদের দূরে ঠেলে ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী যুবদলকে দিনে দিনে দুর্বল সংগঠনে পরিণত করছেন। তাদের আর্থিক লেনদেন, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিবরণ ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আমাদের সাথে আলাপ-আলোচনা কিংবা সমন্বয় ছাড়াই ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামকে বেগবান করার স্বার্থে অবিলম্বে বর্তমান সদর উপজেলা যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন কমিটি করা একান্ত প্রয়োজন।
নেতৃবৃন্দ আরো জানান, চাঁদপুর জেলা যুবদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। ইতিমধ্যে এই কমিটির অনেকে বিএনপিতে স্থান করে নিয়েছেন। কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন, কেউ কেউ আবার বিদেশে অবস্থান করছেন। তাছাড়া কমিটিতে দ্বিধা-বিভক্তি এখন প্রকাশ্য এবং দৃশ্যমান। বর্তমান জেলা কমিটিকে সামনে রেখে চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন অসম্ভব বলেই আমরা মনে করি। তাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের হাতকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা যুবদলের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম উপযোগী নূতন কমিটি করা একান্ত আবশ্যক। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ সাবেক সভাপতির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দু-একদিন ছাড়া দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে আসেননি। সাবেক সভাপতির মৃত্যুর পর সভাপতি পদ পাওয়ার লোভেই তিনি দলীয় কর্মকাণ্ডে সরব হন। দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যুবদলের তৃণমূল পর্যায়ে অনেক নেতা-কর্মী জেল-জুলুম এবং নির্যাতনের শিকার হলেও বর্তমান এ সভাপতি একদিনের জন্যে জেলে যাননি। কিংবা তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। ফেসবুকে আন্দোলন করা এমন নেতাদের বাদ দিয়ে রাজপথের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করে জেলা যুবদলের কমিটি গঠন করার দাবি জানান তারা।
এ সংবাদটিকে আমরা একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করলাম। এর সত্যাসত্য নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমাদের অভিমত হলো, আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন তথা শাসক দল এবং ক্ষমতাবহির্ভূত বড়ো দলগুলো দেশে গণতন্ত্র চর্চা নিয়ে নিরন্তর কথা বলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে জীবন দেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে হয়রান হয়ে যান। কিন্তু দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের অভাব ও বড়ো বড়ো নেতাদের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ নিয়ে বলিষ্ঠভাবে সোচ্চার হন না। কেউ কথা বললেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত প্রতিকারের পরিবর্তে প্রতিবাদকারীকে শায়েস্তা করার ব্যবস্থাই নেয়া হয়। এটা যেন প্রতিবাদকারী কারো কারো নিয়তিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে বড়ো বড়ো দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গতানুগতিক এই চিত্র পাল্টাতে বিদ্যমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় শৃঙ্খলা বিধান করা, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় ক্ষমতার পরিবর্তনে কিংবা ক্ষমতা রক্ষায় দেশকে যতোই উন্নত করা হোক না কেনো, বস্তুত দলকে উন্নত ও সময়োপযোগী করা যাবে না।