সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক

‘ধরবো না আর জাটকা/ইলিশ খাবো টাটকা’-এমন জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন অতীতের ন্যায় জনস্বার্থে টেলিভিশনে এখন আর প্রচারিত হতে দেখা যায় না। সরকার হয়তো বিজ্ঞাপন আর কথায় নয়, খাদ্য সহায়তা দিয়ে জেলেদেরকে জাটকা রক্ষায় বিরত রাখাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে টেলিভিশন, রেডিওসহ শ্রুতিগ্রাহ্য গণমাধ্যম ব্যবহারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। দৃষ্টিগ্রাহ্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, কিছু সভা করেই জাটকা রক্ষায় মার্চ ও এপ্রিল দুমাস নদীতে অভয়াশ্রম পালন, জাটকাবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনায় সরকারের বেশি মনোযোগ। জাটকা রক্ষায় টিভি, রেডিওসহ সকল গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও নদীর তীরবর্তী জনপদে একের পর এক সচেতনতামূলক সভা করে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করে সর্বাত্মক গণজাগরণ তৈরির অনিবার্যতা থাকলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল সেটা উপলব্ধি করছে না। ফলে নদীতে অভয়াশ্রম, খাদ্য সহায়তা ও সাঁড়াশি অভিযান চলাকালে এক শ্রেণির বেপরোয়া জেলে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় জাটকা নিধনে ব্যাপৃত থেকেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে। এক্ষেত্রে এদের কিছু নিরাপদ আস্তানা আছে। চাঁদপুর জেলার হাইমচর, চাঁদপুর সদর, মতলব ও মতলব উত্তর উপজেলার চিহ্নিত কিছু স্থানেই কেবল নয়, খোদ চাঁদপুর শহরেই রয়েছে জাটকাখেকো জেলেদের এমন নিরাপদ আস্তানা। যে আস্তানা সম্পর্কে অনেকে জানলেও রহস্যজনক কারণে না জানার ভান করে। এই আস্তানা সম্পর্কে সাহস করেই সংবাদ পরিবেশন করেছেন চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার গোলাম মোস্তফা।

শুক্রবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘টিলাবাড়িতে জাটকার জমজমাট ব্যবসা’ শিরোনামের সংবাদে তিনি লিখেছেন, চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন লঞ্চঘাট এলাকার টিলাবাড়ি নামক স্থানে গত কয়েক বছরের ন্যায় এ বছরও চলছে জাটকার জমজমাট ব্যবসা। জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমের শুরুর প্রথম থেকেই অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের অর্থায়নে এবং গোপন শেল্টারে স্থানীয় অর্ধশতাধিক জেলেকে দাদন দিয়ে জাটকা ব্যবসা করার জন্যে উৎসাহিত করে আসছে একটি চক্র। সেই কারণে স্থানীয় জেলে নামধারীরা শেল্টার পেয়ে ওই চক্রের সুবিধামতো সময়ে নদীতে নেমে পড়ে জাটকা ধরার জন্য। এই চক্রের কমান্ড অনুযায়ী শুধুমাত্র নদী থেকে জাটকা ধরার পর ঘাটে আনা পর্যন্ত জেলেদের দায়িত্ব শেষ। এরপর জাটকা বিক্রি থেকে সকল দায়িত্ব পালন করে চক্রের সদস্যরা। চক্রটির নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন টিলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত আলী হোসেন (পিতা-আলী আকরাম)। তার দিকনির্দেশনায় এবং কথা মতে স্থানীয় জেলে নূর মোহাম্মদ সরদার, দেলু মোল্লা, জমির হোসেন, সোবহান চোকদার, রহিম গাজী, দাদন চোকদার, আবুল হোসেন, মোস্তফা মোল্লাসহ অর্ধশতাধিক জেলে এই জাটকা ধরার কাজে ব্যস্ত থাকেন। আলী হোসেন সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে নদীতে পাঠান। আবার রাত ১০টার পর সুবিধা মতো সময়ে ফোন দিলে তারা টিলাবাড়ি এলাকায় এসে জাটকাগুলো দিয়ে নিরাপদে স্ব স্ব স্থানে চলে যান। এভাবে আলী হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জাটকা ইলিশের ব্যবসা চলমান থাকলেও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমতাবস্থায় স্থানীয়দের খেদোক্তি : রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টিলাবাড়ি এলাকায় জাটকার যে জমজমাট বাজার চলে, সেখানে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কেনো এই নীরবতা? সচেতন জনগণ মনে করেন, যেখানে সরকার জাটকা রক্ষায় জেলেদের জন্যে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেখানে জাটকা ধরার এই মহোৎসব চলতে পারে না।

জাটকার এই মহোৎসব স্থান থেকে সামান্য দূরত্বে নৌপুলিশের থানা এবং চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ সবসময় সরব থাকলেও টিলাবাড়ি এলাকায় জাটকার মহোৎসব দেখে হতবাক স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা। এ বিষয়ে নৌথানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আপনারা আমাদের মিডিয়া সেলের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অভিযানের সকল খবর পাচ্ছেন। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা মূলত নদীতে কার্যক্রম চালাচ্ছি। নদীতে কোনো জেলের ছাড় নেই। কিন্তু টিলাবাড়ির বিষয়টি আমার জানা নেই। চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহম্মদ আব্দুর রশীদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি এবং পাশাপাশি যানবাহন তল্লাশি করে জাটকা পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করছি। কিন্তু কোথাও জাটকার জমজমাট ব্যবসা চলছে এমনটি আমার জানা নেই।

চাঁদপুর নৌথানা ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ না জানলেও চাঁদপুর বড়ো স্টেশন এলাকার টিলাবাড়িতে যে জাটকার রমরমা ব্যবসা চলে সেটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। অতীতে চাঁদপুর কণ্ঠসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের আলোকে ওই স্থানে পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানের সফলতা এবং জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষাকালীন সাধারণ্যে মুখরোচক গুঞ্জন তার প্রমাণ। আমরা এই জমজমাট ব্যবসা রোধের ব্যাপারে জাটকা রক্ষায় তৎপর জেলা টাস্কফোর্স, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশসহ অন্য সকল সরকারি সংস্থার বিশেষ উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়