সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

এমন প্রধান শিক্ষকদের কলঙ্কিত হবার হাত থেকে বাঁচান

এমন প্রধান শিক্ষকদের কলঙ্কিত হবার হাত থেকে বাঁচান
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের দেশে একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান যে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে অনেক কিছু, তার ভুরি ভুরি প্রমাণ দেয়া যায়। নিখাদ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও আত্মনিবেদনে একজন প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান যখন তাঁর দায়িত্বপালনকে নিতান্তই চাকুরি হিসেবে না নিয়ে ব্রত হিসেবে নেন, তখন তাঁর প্রতিষ্ঠান পেয়ে যায় আশাব্যঞ্জক গতিশীলতা। এমন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে তাঁর অধীনে কাজ করা শিক্ষকরা অনুকরণীয় আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে মনে করেন, আর প্রতিটি শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক পরম শ্রদ্ধেয় বলে মান্য করেন। এর বিপরীতে যদি কিছু হয়, অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি নিতান্তই চাকুরিজীবী ভেবে দায়িত্বপালন করেন, নানা অনিয়মের আশ্রয় নেন, তাহলে পরিস্থিতি কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে, তার বিবরণ তুলে ধরা বিবেকবান মানুষের জন্যে বিব্রতকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমন বিব্রতকর বিবরণ সম্বলিত একটি সংবাদই গত বুধবার চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে।

‘কচুয়ায় এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ' শিরোনামের সংবাদটিতে চাঁদপুর কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি লিখেছেন, কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের ১৪৩নং মধ্য সাদিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল মিয়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অদক্ষতা, বিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থতা ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি (এসএমসি)-এর সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করার বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে যার অনুলিপি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ এপ্রিল সোমবার দুপুরে মধ্য সাদিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুভাস চন্দ্র সেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সরেজমিনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করেন। তদন্তকালে অভিভাবক ও এসএমসির সদস্যরা জানান, জামাল হোসেনের মতো অদক্ষ, অযোগ্য লোক প্রধান শিক্ষক পদের জন্যে নয়। জরুরি ভিত্তিতে তাকে বদলি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। এসএমসির অভিভাবক সদস্য জামাল হোসেন ও খোরশেদ আলম জানান, প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেন বিদ্যালয়ের জন্যে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ ও উন্নয়নমূলক কাজের অর্থ সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। তাছাড়া গত দুই বছর এসএমসির কোনো সভা না করেই প্রধান শিক্ষক তার একক সিদ্ধান্তেই বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এসএমসির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সহ-সভাপতি মোঃ হেলাল মিয়া জানান, বর্তমান সভাপতির পূর্বে আমি দায়িত্বে থাকাকালীন নগদ ৭৫ হাজার টাকা ও ডিজিটাল হাজিরার জন্য ৩০ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের নামে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা রেখে যাই। প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেন কাউকে না জানিয়ে সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন।

প্রধান শিক্ষক মোঃ জামাল হোসেন জানান, আমি বিদ্যালয়ের কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি। সরকারি সকল অনুদান বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করেছি। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুভাস চন্দ্র জানান, অভিযোগ পেয়ে গত সোমবার এসএমসির সদস্য, জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে প্রাথমিক তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করি ও বর্তমানে অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার এএইচএম শাহরিয়া রসূল জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠে পরিবেশিত উপরের সংবাদটিতে একটি প্রাথমিক তথা শিশু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের যে লেখচিত্র পাওয়া গেলো, তাতে সচেতন ও বিবেকবান ব্যক্তিমাত্রেরই মনঃপীড়া না হয়ে পারে না। প্রধান শিক্ষকের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্যে ধরে নিলাম, তিনি আর্থিক অনিয়ম করেন নি। তবে তিনি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি (এসএমসি)-এর সভা দুবছরেও একটি করলেন না কেন? এর পেছনে যে তার খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো, সেটা ধারণা করা যায়। এই প্রধান শিক্ষকের মতো আরো এমন কিছু প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, যারা এসএমসির সভা না করে বা সভার সিদ্ধান্ত এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে স্কুল পরিচালনা করেন, যাতে তারা কম-বেশি বিতর্কিত হন এবং অনেক বড়ো ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলেন। গ্রাম্য প্রবাদ অনুযায়ী বলতে হয়, এমন প্রধান শিক্ষকদেরকে 'সুখে থাকতে যেন ভূতে কিলায়'। আমরা এমন প্রধান শিক্ষকদের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখার জন্যে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার/ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের প্রতি অনুরোধ জানাতে চাই। এতে এমন প্রধান শিক্ষকদের কলঙ্কিত হবার হাত থেকে কম-বেশি রক্ষা করা যেতে পারে বলে মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়