প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত বানানোর অপচেষ্টা দুঃখজনক

ফরিদগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত করার অপচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে জীবিত ভোটারদের মৃত বানানোর চেষ্টার অভিযোগের ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনায় বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সভায় যাদের মৃত বলে তথ্য দেয়া হয় তাদের মধ্যে চারজন উপস্থিত থেকে এহেন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা সভায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে এখনো বেঁচে রয়েছেন বলে উপস্থিতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গত ২৪ মার্চ জনৈক ব্যক্তির মৌখিক অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার উদ্ভব।
জানা গেছে, আগামী ১৩ মে সারাদেশের ন্যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ৩শ’ ৯৫ জনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তালিকা যাচাই-বাছাই সংশোধন শেষে ২ এপ্রিল চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবার কথা। এরই মধ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মৃত ৪ জনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়। কিন্তু আরো ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম মৌখিকভাবে মৃত বলে যাচাই-বাছাইয়ের জন্যে বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত ২৪ মার্চ উপজেলা পরিষদের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমানের কাছে মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন ভূঁইয়া মুঠোফোনে ওই ৭ জনের তালিকা দিয়ে এরা মৃত বলে দাবি করেন। ওই সময়ে মিজানুর রহমান তার অফিসকক্ষে উপস্থিত থাকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সরোয়ার হোসেনের নজরে আনেন তথ্যটি। পরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সহিদ উল্লা তপাদার ও সরোয়ার হোসেন ওই ৭ জনের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন, তারা সকলেই জীবিত রয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ধরনের তৎপরতাকে তারা ঘৃণিত বলে মন্তব্য করেন।
তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া এই ঘটনার বিষয়ে গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সহিদ উল্লা তপদার, মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সভায় সেই তালিকায় থাকা ৪ জন উপজেলার দায়চারা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আহছান উল্লা পাটওয়ারী (পরিচিতি নম্বর ০১২৬০০০০২১৯), তাহেরুল ইসলাম পাটওয়ারী (পরিচিতি নম্বর ০১১৩০০০৩৩৬৪), সাছিয়াখালির আঃ খালেক পাটওয়ারী (পরিচিতি নম্বর ০১১৩০০০০৪০৪) ও বালিথুবা গ্রামের আবুল বাশার ভূঁইয়া (পরিচিতি নম্বর ০১১৩০০০২৪৭) উপস্থিত থেকে তারা মৃত নয় জীবিত বলে নিশ্চিত করেন। এছাড়া উপজেলার বাইরে অবস্থান করা সন্তোষপুর গ্রামের নূরুল আমিন (পরিচিতি নম্বর ০১১৩০০০২৬৮০), ষোলদানা গ্রামের আবুল বাশার ভূঁইয়া (পরিচিতি নম্বর ০১১৩০০০২৮৩০) এবং আদশা গ্রামের মীর মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহিদ (পরিচিতি নম্বর ০১১৩০০০৩৭১২) উপস্থিত ছিলেন না। তবে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার নিশ্চিত করেছেন তারা জীবিত আছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সরোয়ার হোসেন জানান, ঘটনাক্রমে উপজেলা পরিষদের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের অফিসে আমি উপস্থিত ছিলাম। মুঠোফোনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন ভূঁইয়া এই তালিকা দেন। পরে আমি বিষয়টি সংসদ কমান্ডারকে জানাই। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সহিদ উল্লা তপাদার বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত বানানোর অপচেষ্টা ঘৃণিত। যা কোনো ক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জানি কারা জীবিত, কারা মারা গেছেন। ইতোমধ্যেই আমরা তথ্য নিয়ে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জমা দিয়েছি। উপজেলা পরিষদের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, খসড়া ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করার সময় যে কেউই সন্দেহ হলে নাম দিতে পারেন। সেই হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন ভূঁইয়া ৭ জনের তালিকা মুঠোফোনে দিয়েছেন যাচাই-বাছাই করার জন্যে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন ভূঁইয়া জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত বানানোর ঘটনা সঠিক নয়। আমার বিরুদ্ধে অপ্রচার করছে একটি চক্র।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ভোটের বিষয় নিয়ে এ ধরনের অপচেষ্টা দুঃখজনক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা জানান, আমাদের কাছে এসব তালিকা নিয়ে কোনো লিখিত আবেদন কিংবা অভিযোগ আসেনি। আমি অবশ্যই সকল তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে নানামুখি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। নির্বাচনে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পূর্বে এই ধরনের ঘটনা সৃষ্টি তারই অংশ বলে অনেকেই মনে করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও যারা ঝুঁকি নেন, তারা যে ভুল পথে হাঁটেন, আত্মঘাতী কাজ করেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক ব্যক্তি জীবিত ক’জন মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত বানানোর যে অপচেষ্টা করেছেন, তাতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, তাতে আমরাও একাত্মতা পোষণ করছি। আমাদের বিশ্বাস, ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে যথার্থ পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি অন্য কোনো উপজেলায় অনুরূপ কোনো অপচেষ্টা কেউ চালালে সেটি একইভাবে প্রতিহত করা হবে বলেও আমাদের বিশ্বাস।
বলা বাহুল্য, কেউ এখন অনেক কিছু হবার সুযোগ পেলেও মুক্তিযোদ্ধা হবার সুযোগ নেই। তেমনি জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত বানানোর ন্যূনতম সুযোগ নেই। তারপরও যারা এমন সুযোগ সন্ধান করেন, তারা যে কাণ্ডজ্ঞানহীন--সেটা হলফ করেই বলা যায়।