সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনার সাথে চাই দরিদ্র শিক্ষার্থীর সহায়তা

কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনার সাথে চাই দরিদ্র শিক্ষার্থীর সহায়তা
অনলাইন ডেস্ক

সময়টা স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের। কমল অকালে পিতৃহারা হলো। বিধবা মাকে অগত্যা কাজ নিতে হলো ধান ও গম ভাঙ্গানোর মিলে। দিনশেষে যে আয় করতেন তা দিয়ে মা-ছেলের তিনবেলা খেতেই কষ্ট হতো। পোশাক, খাতাণ্ডকলম কেনা সম্ভব হতো না। ছেলেটি গেঞ্জি ও প্যান্ট পরে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে আসে। অন্যের কাছ থেকে পুরানো বই সংগ্রহ করে মা তাকে স্কুলে পাঠান ঠিকই, কিন্তু সাথে থাকে না খাতাণ্ডকলমণ্ডপেন্সিল। লিখে বাড়ির কাজ জমা সে দিতেই পারে না। তবে মুখস্থ করার পড়াটুকু সে ভালোই দিতে পারে। দ্বিতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে সে তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ভালো ছাত্র বলেই সে সহপাঠী ও শিক্ষকদের কাছে পরিচিত। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষা উপকরণ (খাতাণ্ডকলমণ্ডপেন্সিল) কিনতে না পারায় ক্লাসে পিছিয়ে পড়ার উপক্রম হলো। এমতাবস্থায় এক শিক্ষক ক্লাস ক্যাপ্টেনকে কমলের সাহায্যার্থে কিছু করা যায় কিনা সেটি ভেবে দেখতে বললেন। সে মতে ক্যাপ্টেন ১-২-৫-১০ পয়সা/চার আনা/আট আনা করে চাঁদা দিতে সহপাঠীদের অনুরোধ জানালো। এই অনুরোধে সাড়া দেয়া সহপাঠীদের কাছ থেকে ক্যাপ্টেন পাঁচ টাকা জোগাড় করে কমলের জন্যে খাতা, কলম ও কালি কিনে দিলো। এভাবে বহু কষ্টে কমল পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ভালোভাবেই পাস করলো। কিন্তু হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ভর্তি হলো না। সে কাজ নিলো এক দোকানে। কমল অকালে হারিয়ে গেলো তার শিক্ষাজীবন থেকে।

এখন উপবৃত্তির কল্যাণে কমলের মতো শিক্ষাজীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেক কমেছে। তবে দারিদ্র্যের কারণে উচ্চ শিক্ষার্থে কলেজে/মাদ্রাসায় এইচএসসি/আলিমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয় না এসএসসি/দাখিল পাস অনেক শিক্ষার্থীর। এমন দুর্ভাগ্যজনক ড্রপআউটের খবরটি অনেক সমাজ সচেতন লোকও রাখেন না কিংবা রাখার প্রয়োজন মনে করেন না। তবে অনেক সংগঠন/প্রতিষ্ঠান ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তি এসএসসি/দাখিলে জিপিএ-৫প্রাপ্ত শত শত হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গণভাবে সংবর্ধনা প্রদান করে। যেমনটি অতি সম্প্রতি করেছে মতলব উত্তরে একটি সংগঠন। তারা জিপিএ-৫প্রাপ্ত ৩০০ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দিয়েছে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠের মতলব উত্তর ব্যুরো ইনচার্জ মাহবুব আলম লাভলু লিখেছেন, ছেংগারচর পৌর অডিটোরিয়ামে ২০২২ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সংগঠনের উপজেলা সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ মাস্টারের সভাপ্রধানে ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মাউশির সাবেক পরিচালক, সিলেট এমসি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নান। অতিথিবৃন্দ শিক্ষার্থীদের হাতে ফুল, সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেন।

নিঃসন্দেহে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্যে আয়োজক সংগঠনটি অনেক ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু তারা যদি এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্তত তিনজন দরিদ্র শিক্ষার্থীকেও তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্যে অর্থাৎ শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা রাখতেন, তাহলে তারা শুধু ধন্যবাদ নয়, প্রশংসাব্যঞ্জক অভিব্যক্তিতে ঋদ্ধ হতেন। সবচে’ বড়ো কথা, গণভাবে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার গতানুগতিকতার মাঝে ব্যতিক্রম কিছু করার জন্যে নন্দিত হতেন। আমরা চাই এমনটিই। এতে কমলের মতো অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন থেকে অকালে হারিয়ে না গিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষায় মেধার পরিচয় দিয়ে কর্মজীবনে দেশের অনেক কাজে লাগতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়