সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

পঁচিশে মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক দিবস চাই

পঁচিশে মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক দিবস চাই
অনলাইন ডেস্ক

পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম গণহত্যা ন্যুরেমবার্গ হত্যাকাণ্ড নামেই পরিচিত, যা হিটলারের নাৎসী বাহিনী কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়। সেই হত্যাকাণ্ডকে ম্লান করে দিয়ে ঊনিশশো একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালরাতে সংঘটিত হয় কুখ্যাত অপারেশন সার্চলাইট, যার হোতা পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান এবং তার অনুগত শ্বাপদ সহচর টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী গং। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দমাতে না পেরে তারা পঁচিশে মার্চ গভীর রাতে শুরু করে নির্বিচারে গণহত্যা। ঢাকা হতে এ গণহত্যা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। নিরীহ বাঙালির পবিত্র রক্তে সয়লাব হয়ে যায় বাংলার রাজপথ।

মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নকশা ফেঁদে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরিকল্পনা করে 'অপারেশন ব্লিৎস' যা বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল সাতই মার্চের রেসকোর্স ময়দানে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কৌশলের কারণে সেদিন আর অপারেশন ব্লিৎসের রক্তগঙ্গা বাংলায় বয়ে যেতে পারেনি। সেই ব্যর্থতা তারা দূর করল 'অপারেশন সার্চ লাইট' বাস্তবায়ন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের নজির আর দ্বিতীয়টি নেই।

ঘুমন্ত বাঙালিকে ঘুম হতে জাগিয়ে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা মনে করেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে তারা স্তব্ধ করে দিবে। কিন্তু তারা জানতো না, বাঙালির বুকের ভেতরে প্রোথিত আছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে তিনি বলে দিয়েছেন। সেই শক্তির বলেই বাঙালি পেয়ে যায় নিজেদের স্বাধীন দেশ, স্বাধীন পতাকা। কিন্তু যাঁদের রক্তস্রোতে এসেছে এই স্বাধীনতা, তাঁদের সেই আত্মদান মনকে ভারী করে তোলে নিরন্তর। যতদিন না এই গণহত্যার জন্যে পাকিস্তান প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইবে, ততদিন পর্যন্ত এই কষ্ট আমাদের তাড়িয়ে বেড়াবে নিরন্তর।

আমরা চাই, জাতিসংঘ পঁচিশে মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস বা ইন্টারন্যাশনাল জেনোসাইড ডে হিসেবে ঘোষণা করুক, যেমনটি একুশে ফেব্রুয়ারিকে তারা ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের নির্মমতার প্রকৃত ইতিহাস যেমন বিশ্ব জানবে, তেমনি একাত্তরের পঁচিশে মার্চ বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, এ তথ্যও প্রতিষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি আমরা চাই, জাতিসংঘের দূতিয়ালিতে পাকিস্তান বিশ্ববাসীর সামনে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুক। যদি তা আদায় করা যায়, তবেই শহিদেরা পরকালে পরিতৃপ্ত হবে আপন আপন ত্যাগের মাহাত্ম্যে।

পঁচিশে মার্চের কালরাতকে কেবল ব্ল্যাক আউট ও মোমবাতি প্রজ্বালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, একে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের মর্যাদা এনে দিতে হবে এবং তা বাঙালির চেতনায় ধারণ করে আগামী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের প্রতি প্রজন্মের আগ্রহ ও অনুরাগ প্রতিষ্ঠিত হবে। জয় বাংলা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়