প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

রমজান হচ্ছে পবিত্রতম একটি মাস। পবিত্রতা, মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য-যে কোনো বিচারে এ মাসটি শুধু বিশ্বের মুসলমানদের কাছে নয়, অন্যান্য সম্প্রদায়ের কাছেও সমাদৃত। ইসলামী বর্ষ পঞ্জিকার হিসেবে এ মাসটি হচ্ছে নবম মাস, যে মাসের প্রতিটি দিন মুসলমানদের জন্যে রোজা পালন অবশ্য পালনীয় তথা ফরজ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত পবিত্র কোরআনের বাণী হচ্ছে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর করা হয়েছে, যাতে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। এই রোজা হচ্ছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়। রোজা বা সাওম হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা গুনাহের কাজ এবং স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা।
পবিত্র মাহে রমজানের সর্বাত্মক মাহাত্ম্য ফুটে উঠেছে আল-কোরআনের তথা মহান আল্লাহর নি¤েœাক্ত বাণীতে : রমজান মাস হচ্ছে সেই মাস যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছিল; মানবজাতির জন্যে কোরআন একটি হেদায়েত ও হেদায়েতের সুস্পষ্ট প্রমাণ এবং মানদণ্ড (সঠিক ও ভুলের)। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ বেঁচে থাকে তবে এই মাসে রোজা রাখে এবং যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে।
রোজার যে কতো বড় গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে, সেটি কিছু হাদিস থেকেও প্রমাণিত। একটি হাদিস হচ্ছে : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব সহ রমজান মাসের সিয়াম (রোজা) পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী : ৩৮ ও সহীহ মুসলিম : ৭৬০)। এ দুটি গ্রন্থে একই বর্ণনাকারী থেকে উদ্ধৃত আকেরটি হাদিস হচ্ছে, সিয়াম (রোজা) হচ্ছে ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন সিয়াম পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে অথবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায়, সে যেন বলে, আমি রোজাদার। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদিসে আল্লাহকে উদ্ধৃত করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্যে, কিন্তু সিয়াম আমার জন্যে এবং আমিই এর প্রতিদান দেব।
রমজান মাসে মুসলমানগণ অধিক ইবাদত করে থাকেন। কারণ এ মাসের ইবাদতের সওয়াব বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে বলা হয় লাইলাতুল ক্বদর, যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে এবং যে রাতকে আল্লাহ পাক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে অভিহিত করেছেন। এ মহিমান্বিত রাতে ইবাদত করলে হাজার মাসের ইবাদত থেকেও অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।
আজ এই পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন। এই দিনে এই মাসটিকে জানাই স্বাগত। বৈশ্বিক মহামারী করোনার মধ্যেই আমরা দ্বিতীয়বার মাসটিকে পেলাম। আসুন, মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিটি মানুষ এই মাসে রোজা পালন ও অধিক ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর এতোটা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে চেষ্টা চালাই, যাতে তিনি আমাদের ওপর বালা বা গজব হিসেবে নেমে আসা 'করোনা'কে চিরতরে দূর করার জন্যে আমাদের আকুল মোনাজাত কবুল করেন।