প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই প্রশ্নের জবাব খোঁজা দরকার

সাবেক জাতীয় ফুটবলার মোস্তফা হোসাইন মুকুল সম্প্রতি চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়াকণ্ঠ বিভাগের সাথে আলাপচারিতা বলেছেন, জেলার ২টি ক্রিকেট একাডেমী, ২টি ফুটবল একাডেমী যদি খেলোয়াড় বের করতে পারে, তাহলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা কেনো পারবে না? তিনি ‘চাঁদপুরের খেলাধুলার উন্নতির ক্ষেত্রে কী করা প্রয়োজন’ এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা এমন প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, চাঁদপুরের খেলাধুলার উন্নতি করতে হলে জেলা পর্যায়ে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে। খেলাধুলার সাথে যারা জড়িত আছে এবং ছিলো তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন কমিটি করে খেলাধুলার কাজে লাগাতে হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে কিংবা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা নিজ নিজ উপজেলাতে বিভিন্ন ক্রীড়াভিত্তিক ইভেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে খেলোয়াড় বাছাই করতে হবে। তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাকে খেলাধুলার ক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার উচিত মাঠটিকে রাজনীতি মুক্ত রাখা। তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন থেকে শিক্ষার্থীদেরকে মানসিকভাবে তৈরি করতে হবে। ১০টি ইভেন্ট দিয়ে দিতে হবে। বাচ্চারা যেটাতে ভালো করবে সেটাতেই তাকে উৎসাহ দিতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা করি না। ক্রীড়া শিক্ষককে প্রতিদিন একটি সময় করে খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে খেলার বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁর মতে, খেলাধুলায় চাঁদপুরের বেশ সুনাম রয়েছে। বর্তমানে সে সুনাম কম-বেশি হারিয়ে যাওয়ার পথে। সেটি পুনরুদ্ধারে পরিকল্পনা মাফিক সকল কিছু করতে হবে। যে যেই জায়গায় যোগ্য সেই জায়গাতে তাকে বসাতে হবে। জেলার ২টি ক্রিকেট একাডেমী, ২টি ফুটবল একাডেমী যদি খেলোয়াড় বের করতে পারে তাহলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা কেনো পারবে না? যারা বিভিন্ন ক্লাবের সাথে জড়িত রয়েছে তাদেরকে খেলাধুলার বিষয়ে অনেক কিছু জানতে হবে। বিভিন্ন উপ-কমিটি করে দিতে হবে। যাতে করে যে যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে। এছাড়া খেলোয়াড়দেরকেও নিজ খেলাধুলার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এক ম্যাচে খেলতে পারেনি তো তাতে কী হয়েছে ? দলের হয়ে যেনো সবসময়ই খেলতে পারে সেজন্যে নিজেকে তৈরি করতে হবে।
মোস্তফা হোসাইন মুকুল বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। তিনি দূরে থেকেও অনলাইনে চাঁদপুর কণ্ঠ পড়ে কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গনের হালহকিকত জানার চেষ্টা করেন। সে জানার আলোকেই তাঁর কাছে মনে হয়েছে, ক্রীড়ায় চাঁদপুরের যে সোনালী অতীত রয়েছে, তার সমান্তরালে বর্তমানে চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন সরব নয় এবং খেলোয়াড়দের কৃতিত্বে রঙ্গিন নয়। যখন চাঁদপুরে স্টেডিয়াম, আউটার স্টেডিয়াম, সুইমিংপুল ছিলো না, ছিলো একটিমাত্র বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, তখন ক্রীড়া-সাফল্যে চাঁদপুর যতোটা ভাস্বর ছিলো, আর এখন একাধিক ও আধুনিক বাস্কেটবল গ্রাউন্ড, সুপরিসর স্টেডিয়াম, আউটার স্টেডিয়াম, সুইমিংপুল সহ ক্রীড়াচর্চার ক্ষেত্রে সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও চাঁদপুরের ক্রীড়া-সাফল্য সোনালী অতীতের মতো নয়। কেনো এমন? যদি বেসরকারিভাবে পরিচালিত চাঁদপুরের দুটি ক্রিকেট একাডেমী ও দুটি ফুটবল একাডেমী অভাব-অনটন ও নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও খেলোয়াড় তৈরি করতে পারে, তাহলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা সরকারি তাবৎ সুযোগ-সুবিধা, এমনকি বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা রপ্ত করেও কেনো জাতীয় মানের খেলোয়াড় বের করে আনতে পারছে না--এটা যৌক্তিক প্রশ্ন। পরপর তিনবার স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে সাবেক জাতীয় ফুটবলার গোলাম মোস্তফা বাবু জেলা ক্রীড়ার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বপালন করছেন। বলা যায়, স্টেডিয়ামেই পড়ে থাকেন তিনি। তারপরও কেনো চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন আশানুরূপ সাফল্য দেখাতে পারছে না, সেটা আসলে উদ্বেগেরই বিষয়। বার্ষিক ক্রীড়া ক্যালেন্ডার না করা কিংবা করেও সেটা না মানতে পারা, উন্নতমানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে না পারা, না অন্য কোনো কারণে জেলা ক্রীড়া সংস্থা প্রত্যাশিত সাফল্য বের করতে পারছে না, এটা নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি (জেলা প্রশাসক) সহ সংশ্লিষ্ট সকলের ভেবে দেখা উচিত। এজন্যে নবীন-প্রবীণ ক্রীড়াবিদ, সুধী পর্যবেক্ষকদের সাথে মতবিনিময়, গোলটেবিল বৈঠক ইত্যাদি আয়োজন করা যেতে পারে বলে আমরা মনে করি।