সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

যে মিলনমেলা ব্যতিক্রমই বটে
অনলাইন ডেস্ক

ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমাদের দেশের সর্বত্র নানা ধরনের মিলনমেলা, পুনর্মিলনী, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি আয়োজন হতে দেখা যায়। এমন আয়োজন পাঁচ বছর আগে যতোটা দেখা যেতো, এখন তারচে' বেশি দেখা যায়। ফলে গতানুগতিকতায় পর্যবসিত হওয়াটা স্বাভাবিক। তারপরও ব্যতিক্রম কিছু দেখা গেলে ভালো লাগে, একটু থমকে দাঁড়াতে হয়। বস্তুত এমন কিছুই দেখা গেলো অতি সম্প্রতি চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের বহুল পরিচিত মৈশাদী গ্রামে।

‘মৈশাদী পাটোয়ারী পরিবারের মিলনমেলা’ শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদীর ঐতিহ্যবাহী নসর উল্লাহ পাটোয়ারী বাড়িতে ‘পাটোয়ারী পরিবারের মিলনমেলা ২০২৩’ দিনব্যাপী আনন্দঘন পরিবেশে এবং স্মৃতিচারণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে গত ২০০ বছর পূর্ব থেকে এই বাড়িতে বসবাসকারী প্রজন্মের বংশ পরিক্রমায় জীবিত প্রবীণ ও নবীন সদস্যরা মিলিত হন। সকালে বাড়ির প্রয়াত ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত ও রুহের মাগফিরাত কামনায় শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। দোয়া পরিচালনা করেন বাড়ির প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ্ব অধ্যাপক হাফেজ মোঃ বশির উল্লাহ। এরপর জেলা ও জেলার বাইরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত পাটোয়ারী পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। তাদেরকে স্বাগত জানান মিলনমেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মানিকসহ অন্য সদস্যরা। সকালের নাস্তা পর্বে অংশগ্রহণ করেন আড়াই শতাধিক সদস্য। বাড়ির সামনে প্রতিষ্ঠিত বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী একাডেমি প্রাঙ্গণে শুরু হয় পাটোয়ারী পরিবারের ২শ’ বছর পূর্ব থেকে প্রজন্মের পরিচিতি পর্ব। এটি পাঠ করেন মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী। এরপর আসে আবেগঘন স্মৃতিচারণ পর্ব। এই পর্বে মঞ্চে মিলিত হন প্রবীণ ভাই-বোনেরা। সভাপ্রধানে ছিলেন আলহাজ্ব অধ্যাপক হাফেজ মোঃ বশির উল্লাহ। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী বীর প্রতীক, পি জহির উল্যাহ (বাদল), অধ্যক্ষ শাহ্ মোঃ জালাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ মোঃ মোশারফ হোসেন সহ আরো অনেকে।

স্মৃতিচারণ পর্বে অনেকেই ছোটবেলার নানা ঘটনার বর্ণনা করেন। এর মধ্যে ক’জন তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন পাটোয়ারী বাড়ির সামাজিক ভূমিকার কথা। এই বাড়ি থেকে চাঁদপুরে প্রথম ইউনিয়ন পর্যায়ে মৈশাদী ইউনিয়নকে ভিক্ষুকমুক্ত করা হয়। বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী ও তাঁর ভাই চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী ১০ বছর এলাকার গরীব লোকদের নিয়মিত সহযোগিতা করে ভিক্ষাবৃত্তিমুক্ত করেন। পরবর্তীতে চাঁদপুর জেলায় ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা হিসেবে এটিকে মডেল রূপে গ্রহণ করা হয়। স্মৃতিচারণ শেষে পাটোয়ারী পরিবারের নবীনদের হাত থেকে প্রবীণরা সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন। এছাড়া উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে পরিবারের কৃতী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। দিনব্যাপী এ মিলনমেলায় নবীন-প্রবীণদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন খেলাধুলা এবং সর্বশেষ বীর প্রতীক মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী একাডেমির শিক্ষার্থীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও পুরস্কার বিতরণও করা হয়।

আমাদের সমাজে কোনো বংশের বাড়ি পর্যায়ে ঐক্য ও মেলবন্ধন ক্রমশ স্বার্থের দ্বন্দ্ব সহ বহু কারণে বিলীন হতে চলেছে। এক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে এবং একই বাড়ির লোকদের মধ্যে নানা কারণে যেখানে সংঘাত-সংঘর্ষ, মামলা-হামলার ঘটনার খবর পত্রিকায় প্রকাশ করতে করতে আমরা হয়রান, সেখানে মৈশাদী গ্রামে বিদ্যমান পাটোয়ারী বংশের কয়েক বাড়ির দুশতাধিক সদস্যের অংশগ্রহণে 'পাটোয়ারী পরিবারের মিলন মেলা' শিরোনামে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজনকে ব্যতিক্রমই বলতে হয়। এতে এমন আরো অনেক পরিবার অনুরূপ মিলনমেলা কিংবা আরো ব্যতিক্রম কিছু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে। এর ইতিবাচক প্রভাব সমাজকে ঋদ্ধ করবে এবং ভালো কিছু করার তাগিদে অনেককে উজ্জীবিত করবে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়