প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর সরকারি কলেজ হচ্ছে চাঁদপুর জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এটিকে মেঘনা পাড়ের বাতিঘর বলে অভিহিত করা হয়। এ কলেজটি কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। ১৭টি বিষয়ে স্নাতক সম্মান, ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি এবং স্নাতক পাস কোর্স ও এইচএসসিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে কলেজটিতে। প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত এ শিক্ষাঙ্গনটি চাঁদপুর জেলা ও জেলাবাসীর অনন্য অহঙ্কারের বিষয়। বাংলাদেশে মহকুমা পর্যায়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি যখন নিতান্তই স্বপ্নের পর্যায়ে ছিলো, তখন চাঁদপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে এখানকার বিদ্যোৎসাহী ব্যবসায়ীদের কল্যাণে।
১৮৯৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর পর ১৯২২ সালে নোয়াখালী জেলায় ফেনী কলেজ, ৪২ বছর পর ১৯৪১ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় শ্রীকাইল কলেজ ও ৪৪ বছর পর ১৯৪৩ সালে নোয়াখালীর প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রে চৌমুহনী সালেহ আহমেদ ( এসএ) কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তারপর বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার মধ্যে চতুর্থ কলেজ হিসেবে ১৯৪৬ সালে চাঁদপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তার দু বছর পর ১৯৪৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ও মাদারীপুর কলেজ, ১৯৬১ সালে লক্ষ্মীপুর কলেজ, ১৯৬২ সালে ভোলা কলেজ, ১৯৬৩ সালে নোয়াখালী কলেজ, ১৯৬৪ সালে চাঁদপুর মহিলা কলেজ ও ১৯৭৮ সালে শরীয়তপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমার চারপাশে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর ও ভোলায় কলেজগুলোর বিলম্বিত প্রতিষ্ঠার কারণে চাঁদপুর কলেজ প্রকৃত অর্থেই মেঘনা পাড়ের বাতিঘর হিসেবে উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং সাফল্য অর্জন করে। কুমিল্লা জেলা সদরের বাইরে চাঁদপুর কলেজের পাঁচ বছর আগে শ্রীকাইল কলেজ প্রতিষ্ঠা পেলেও শিক্ষার্থী সঙ্কটে শুরু থেকেই ভীষণ হোঁচট খায় এবং ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কলেজটি প্রায় ৬ বছর বন্ধ থেকে ১৯৬৩ সালে পুনরায় চালু হয়। এ কলেজটি প্রাচীনত্বে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও চাঁদপুর কলেজ থেকে শিক্ষার্থীর দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। শ্রীকাইল কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা এখনও দু হাজার না হলেও চাঁদপুর কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সেজন্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পর বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় নিরবচ্ছিন্ন পাঠদানে সবচে' প্রাচীন ও সফল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চাঁদপুর কলেজই। এ কলেজটিকে ১৯৮০ সালে জাতীয়করণ তথা সরকারি করা হয়।
বেসরকারি ৩৪ বছর ও সরকারি ৪১ বছর মিলিয়ে এ কলেজটির ৭৫ বছরপূর্তি হয় ২০২১ সালের ৩১ মে তারিখে। সেমতে ওই বছরের ১ জুন মাইলফলক অর্জনের উপলক্ষটিকে প্লাটিনাম জুবিলি হিসেবে সাড়ম্বরে উদযাপনের যৌক্তিকতা ছিলো। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সেই উদযাপন আর সম্ভব হয়নি। অবশেষে বেটার লেট দ্যান নেভার প্রবাদ বাক্যটির আনুকূল্যে এক বছর আট মাস ২৩ দিন পর আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে শুরু হচ্ছে কলেজটির ৭৫ বছরপূর্তিতে প্লাটিনাম জুবিলির দুদিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান আয়োজনে গঠিত মূল কমিটির আহ্বায়ক ও সচিবসহ অন্য ক’জন সদস্যের এবং কিছু উপ-কমিটির সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রম যে কতোটা রয়েছে সেটা বর্ণনা করা অসম্ভব। ফলস্বরূপ ১৯৮৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর কলেজের ৪২ বছরপূর্তিতে প্রায় ৮০০ জন ও ২০০৮ সালের ১ মার্চ ৬২ বছরপূর্তিতে ১২৪৩ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনের বিপরীতে ২৫৯৮ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ১০২৮ জন অতিথি ও বর্তমান পঁচিশ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ ছয় হাজারেরও অধিক সংখ্যক জনের রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করে এবারকার প্লাটিনাম জুবিলিতে পুনর্মিলনী আয়োজনের মহাযজ্ঞ সম্পাদিত হতে যাচ্ছে। এবারের আয়োজকরা যে অনাহুত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এ প্লাটিনাম জুবিলিকে সম্ভাব্যতার পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, সেটা অনেক বড়ো বিষয়। এ জুবিলিকে সফল করার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য যতোজনের সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, তাঁদেরকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করতেই হবে। আমরা চাঁদপুর কলেজের প্লাটিনাম জুবিলির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি।