প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরো সক্রিয়তা প্রয়োজন
উপজেলার সরকারি হাসপাতাল বলতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বুঝানো হয়। যে হাসপাতালগুলো উপজেলা সদরে অবস্থিত। তবে কোনো কোনো জেলা সদরে জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল থাকায় সে উপজেলায় আর পৃথক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকে না। যেমনটি চাঁদপুর সদর উপজেলায়। এ উপজেলার মধ্যেই জেলা সদর হাসপাতাল বর্তমানে আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থাকায় সদর উপজেলায় পৃথক কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই।
|আরো খবর
তথ্য মতে সারাদেশে ৪৯৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। চাঁদপুর জেলায় রয়েছে সাতটি। এ জেলার আট উপজেলার মধ্যে সদর বাদ দিয়ে অন্য সাত উপজেলায় একটি করে সাতটি রয়েছে। চাঁদপুরের সাত উপজেলার কোনোটিতে ৩১ শয্যার আবার কোনোটিতে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার। আর অন্য চার উপজেলার ৩১ শয্যার। ৫০ শয্যার একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পদ ৩১টি আর ৩১ শয্যার জন্য ১৭ থেকে ২০টি। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে ২০-২২ জন ডাক্তার কর্মরত থাকেন। আর ৩১ শয্যার হাসপাতালে থাকেন গড়ে ১৫ জন। কর্মরত এসব চিকিৎসকের সক্রিয় কার্যক্রম যদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকতো, তাহলে গ্রাম পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা আরো উন্নত থাকতো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম যে কতটা নাজুক তা বর্তমান করোনাকালে বুঝা গেছে। এ সময়ে জেলা সদর হাসপাতালে যেখানে রোগীতে ঠাঁসা, মেঝে ও বারান্দায় রোগীর ঠাঁই হচ্ছে, সেখানে উপজেলার হাসপাতালগুলো ফাঁকা। সেখানে বেড খালি। করোনায় আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে সব রোগী চলে আসছে চাঁদপুর শহরে জেলা সদর হাসপাতালে। যার কারণে এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের অবস্থা যেমনি বেসামাল, তেমনি হাসপাতালটির পরিবেশও খুব খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে।
গ্রাম থেকে শহরে রোগী চলে আসার চিত্র শুধু চাঁদপুরে নয়, সারাদেশেই। তবে চাঁদপুর প্রসঙ্গ বলতে গেলে খুবই হতাশার ও উদ্বেগের। জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গ্রাম থেকে প্রচুর রোগী আসছে। করোনায় আক্রান্ত এবং উপসর্গ উভয় ধরনের রোগীই আছে। সিভিল সার্জনের বক্তব্য হচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত হলেও প্রাথমিক স্টেজের রোগীকে হাসপাতালে আনার প্রয়োজন নেই। শ্বাসকষ্ট হলেও যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০ পর্যন্ত থাকবে তারা বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেবে এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলবে। কিন্তু বাস্তবতা দেখা গেছে যে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা উপসর্গ নিয়ে রোগী গেলে সেখানে তার চিকিৎসা দিতে চান না ডাক্তাররা। তাকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসব রোগীকে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না বা ভর্তি করানো হচ্ছে না তা ৩১ জুলাইয়ের চিত্র দেখলেই বুঝা যায়। এ দিনকার তথ্য থেকে জানা গেছে, এ দিন হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি ছিলো ২ জন, মতলব উত্তরে ২ জন, মতলব দক্ষিণে চারজন, ফরিদগঞ্জে চারজন, হাজীগঞ্জে তিন জন, কচুয়ায় ২ জন ও শাহরাস্তিতে ৮ জন। এই চিত্র মোটেই সন্তোষজনক নয়। গ্রাম থেকে আসা রোগীর স্বজনরা বলছেন, তারা উপজেলা হাসপাতালে গেলেও তাদেরকে সদরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বর্তমান এই অতিমারির মহাদুর্যোগকালে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে-শহর, গ্রাম সকল পর্যায়ের চিকিৎসকগণ যাতে সমানভাবে আন্তরিক হোন। বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ যাতে আরো বেশি সক্রিয় ও আন্তরিক হোন। মানবসেবায় ব্রতের যে অঙ্গীকার করে তাঁরা এই মহান পেশায় এসেছেন, সেটির দৃষ্টান্ত যেনো তাঁরা এই দুঃসময়ে দেখান। তাহলেই তাঁরা সাধারণ থেকে অসাধারণের কাতারে শামিল হতে পারবেন।