প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

চাঁদপুর জেলার কিছু স্থানে কেন্দ্রীয় মসজিদ ও গণকবরস্থান দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর উদ্যোক্তা ধর্মপ্রাণ বিত্তবান চিত্তবান মানুষেরা। মতলব উত্তরে ও ফরিদগঞ্জে গ্রাম পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মসজিদ দেখলে এর সৌন্দর্যে থমকে দাঁড়াতে হয়। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দাতা সংস্থাও নিষ্কন্টক ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তিতে করে দিচ্ছে সুদৃশ্য মসজিদ। সরকার উপজেলা পর্যায়ে করছে মডেল মসজিদ। এমন মসজিদগুলো দেখলে যেমন মন জুড়িয়ে যায়, নামাজ পড়তে গিয়েও তৃপ্তি পাওয়া যায়। মসজিদের খতিব ও ইমাম যদি আমল-আখলাকে ভালো হন, জ্ঞান-গরিমায় ঋদ্ধ হন, তাহলে মসজিদের সৌন্দর্য ছাপিয়ে তাতে মুসুল্লির সংখ্যা বাড়তেই থাকে। মসজিদ পরিচালনা কমিটি দক্ষ ও সক্রিয় হলে মসজিদের উন্নয়ন যেমন হয়, তেমনি ভালো খতিব-ইমামণ্ডমোয়াজ্জিন নিয়োগ দেয়াও সম্ভব হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, এমন কমিটি কোনো গ্রাম বা এলাকার কেন্দ্রীয় মসজিদের ক্ষেত্রেই সাধারণত পাওয়া যায়, অন্য মসজিদের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মানের পাওয়া যায় না। সে বিবেচনায় কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণ এবং এর সুষ্ঠু পরিচালনা মডেল হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে।
আমাদের শহরগুলোতে গণকবরস্থান আছে। কিন্তু গ্রামগুলোতে গণকবরস্থান বিরলদৃষ্ট। গ্রামের পুরানো বাড়িতে বসবাসের ঘরগুলো থেকে দূরবর্তী স্থানে পুুকর পাড়ে, বিভিন্ন গাছ দ্বারা পরিবেষ্টিত নির্মম স্থানে, বাঁশ বাগানে, অব্যবহৃত বা পরিত্যক্ত স্থানে কবরস্থান দেখতে পাওয়া যায়। এমন বাড়িতে বসত ভিটার সংখ্যা বাড়াতে গেলে বিদ্যমান কবরস্থান প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্যে বাড়ির নিকটস্থ ফসলি জমিতে নূতন বাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার প্রবণতা সচরাচর লক্ষ্য করা যায়। এতে ফসলি জমির পরিমাণ নিত্যই কমছে। এটি লক্ষ্য করে অনেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি গ্রামেও গণকবরস্থান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদী ও রামচন্দ্রপুর এবং মতলব উত্তরসহ আরো অনেক স্থানে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উদ্যোগে এমন গণকবরস্থানের সন্ধান পাওয়া যায়।
গত ৩১ অক্টোবর চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহতলী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন স্থানে একটি গণকবরস্থানের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর অন্যতম ভূমিদাতা দৈনিক চাঁদপুর খবরের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সোহেল রুশদী। তিনি এখানে কবরস্থ মরহুমদের তালিকা করে নেমপ্লেট করা, কবরস্থান সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে পাইলিং করা, আশেপাশে যাদের মৃত্যুর পর কবর দেয়ার নিজস্ব জায়গা নেই তাদেরকে এখানে দাফন করা, দাফন-কাফনের খরচ বহন করার আশ্বাস দেন। নিঃসন্দেহে তিনি সহ এলাকাবাসী গণকবরস্থানের জন্যে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটা সময়োপযোগী অনেক বড় মহৎ কাজ।
আমরা আমাদের দেশের গ্রামগুলোতে কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রতিষ্ঠা এবং গণকবরস্থান তৈরির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে চাই। যেসব স্থানে বেসরকারিভাবে এমন মসজিদ ও গণকবরস্থান তৈরিতে উদ্যোক্তারা সফল হয়েছেন তাদের কর্মকৌশল ও অভিজ্ঞতা জেনে নিয়ে নূতন উদ্যোক্তারা তাদের কাজ শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে খাস জমি প্রদান, সরকারি অনুদান কিংবা জনপ্রতিনিধিদের পৃষ্ঠপোষকতা কোথাও কোথাও উদ্যোক্তাদের জন্যে হতে পারে প্রণোদনার মতো বিষয়। আশা করি, ক্রমবর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার এ দেশে ঘনবসতিপূর্ণ জনপদে শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যের স্বার্থে কেন্দ্রীয় মসজিদ ও গণকবরস্থানের বিষয়টি সচেতন ব্যক্তিমাত্রই ভাববেন এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তা-চেতনা থেকে আন্তরিক ভূমিকা নিশ্চিত করবেন।