প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
এ অশ্লীলতা কি প্রতিরোধযোগ্য নয়?
চাঁদপুর-ঢাকা নৌরূটে চলাচলকারী লঞ্চগুলো উপভোগ্য নৌভ্রমণের জন্যে যে কতোটা উপযোগী এবং জনপ্রিয় সেটা দুজন রাষ্ট্রদূতের উচ্ছ্বসিত অভিব্যক্তি উল্লেখ করলেই বোঝা যায়। এঁদের একজন পঙ্কজ সরন, যিনি ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। তিনি তাঁর কর্মকালে ২০১৩ সালে চাঁদপুর সফরে আসেন নৌপথে। অবস্থান করেন চাঁদপুর শহরের ষোলঘরস্থ পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউসে। এখানকার মিলনায়তনে তিনি চাঁদপুরের সুধীবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। তিনি তাঁর বক্তব্যে ঢাকা-চাঁদপুর নৌরূটের ভ্রমণকে শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, পুরো মহাদেশের মধ্যে ফ্যানটাস্টিক তথা চমৎকার নৌভ্রমণ হিসেবে আখ্যায়িত করে নিজের উচ্ছ্বসিত অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন।
|আরো খবর
বাংলাদেশে নিযুক্ত বর্তমান ব্রিটিশ হাইকমিশনার হচ্ছেন রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন। একজন বিদগ্ধ কূটনীতিক হিসেবে তিনি খ্যাতিমান। তিনি গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট চাঁদপুর সফর করেন। তিনি চাঁদপুরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ’র জাহাজ নয়, ঢাকা-চাঁদপুর নৌরূটের বিলাসবহুল লঞ্চকে বেছে নেন। তাঁর সফরসঙ্গী হন ইউএনডিপির উপ-আবাসিক প্রতিনিধি ভ্যান নগুয়েন। তাঁরা আসেন চাঁদপুর পৌরসভা ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ পরিদর্শনে। ২৫ আগস্ট চাঁদপুরে দুদিনব্যাপী সফর সমাপ্তির প্রাক্কালে চাঁদপুর পৌরসভায় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা থেকে চাঁদপুর আসতে নৌপথের এবং নদীর দু তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিষয়ে ব্রিটিশ হাই কমিশনার তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
চাঁদপুর-ঢাকা নৌরূটের গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা দেখে নৌপরিবহন ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতামূলকভাবে এই রূটে নামাতে থাকে একের পর এক বিলাসবহুল লঞ্চ। সেজন্যে এ রূটটিকে এক শ্রেণীর বিকৃত রুচির যাত্রীরা তাদের যৌনলিপ্সা মিটানোর মোক্ষম অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারা লঞ্চগুলোর কেবিন ভাড়া নিয়ে নির্বিঘেœ সম্পাদন করে যতোসব অশ্লীল কাজ। এমনটি রোধে লঞ্চগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে কেবিন ভাড়া দেয়ার জন্যে লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা প্রদান করলেও তারা তা মানছে না। ফলে লঞ্চের কেবিনে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও ঘটছে। দেড় বছর পূর্বে এমন হত্যার শিকার অজ্ঞাত তরুণীর লাশের কোনো কুলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। যেটা নিয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ঢাকা-চাঁদপুর নৌপথে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে লঞ্চ নামালেও কমপক্ষে এক লঞ্চ টাকা ব্যয় করে লাগাচ্ছে না সিসি ক্যামেরা, যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যে কারণে লঞ্চের বিভিন্ন স্থানে অশ্লীলতা, চুরি এবং কেবিনে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে দায়ী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায় না। সিসি ক্যামেরা লাগাতে নৌপুলিশের নির্দেশনা না মানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কাগজপত্র না দেখে নারী-পুরুষকে কেবিন ভাড়া দেয়ার কাজটা লঞ্চ কর্তৃপক্ষ কীভাবে অবাধে করে চলছে এবং এক্ষেত্রে তাদের খুঁটির জোর কোথায় সেটি জানার কৌতূহল তৈরি হয়েছে সচেতন ব্যক্তিবর্গের মাঝে। সবার একটাই কথা, লঞ্চের অশ্লীলতা কি প্রতিরোধযোগ্য নয়?