প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
আবার চালু হোক ডেমু ট্রেন
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথসহ দেশের বিভিন্ন শাখা রেলপথে, এমনকি প্রধান রেলপথে স্বল্প দূরত্বে ডেমু ট্রেনের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। ডেমু মানে ডিজেল-ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট। এই ট্রেনে থাকে তিনটি বগি। মাঝখানের বগিটিই থাকে ইঞ্জিনবিহীন এবং বাকি দুদিকের দুটি বগি থাকে ইঞ্জিন সম্বলিত। এ তিনটি বগিতে ১৪৯ জন যাত্রী আসনে বসে এবং দেড়শ’ যাত্রী দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। চীন থেকে এমন ২০টি ডেমু ট্রেন আমদানিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয় হয় ৬৪৫ কোটি টাকা, যার মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০ বছর। সে হিসেবে ২০১৩ সালে চালুকৃত ট্রেনগুলো ২০৩৩ সাল পর্যন্ত চালু থাকার কথা। কিন্তু ৭ বছরের মধ্যে ট্রেনগুলো একের পর এক বিকল হয়ে যায়। মেরামতের জন্যে যোগাযোগ করলে চীনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দাবি করে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা, যাতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে বছরের পর বছর অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে ডেমু ট্রেনগুলো।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ রেলওয়ে সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর সাবেক শিক্ষার্থী ও আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামানের কাছে। তিনি ডেমু ট্রেন নিয়ে রীতিমত গবেষণায় লিপ্ত হন। গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার করেন সৈয়দপুর রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবের একটি কক্ষ। ৭২ দিনের গবেষণায় তার কাছে ধরা দেয় সাফল্য। তিনি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন ডেমু ট্রেন চালানোর নতুন প্রযুক্তি, যেটি আমাদের দেশের বাস-ট্রাক চালানোর প্রযুক্তির মতোই। তিনি ডেমু ট্রেনে বিদ্যমান প্রতিটি প্রায় ৭ লাখ টাকা মূল্যের ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ৪০টি মডিউল সরিয়ে খুবই স্বল্পমূল্যে বসান মাত্র দুটি কন্ট্রোলার। এতে চালু হয়ে যায় অচল এক সেট ডেমু ট্রেন। গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনের মধ্যে কিছু যাত্রী নিয়ে শুরু হয়েছে ডেমু ট্রেনের ট্রায়াল রান, যা চলবে তিন মাস। সব কিছু ঠিক থাকলে বাকি ১৯ সেট অকেজো ডেমু ট্রেন সচল করার উদ্যোগ নেয়া হবে। এর মধ্যে অবশ্যই চাঁদপুর-লাকসাম-কুমিল্লা রেলপথে চলাচলকারী ডেমু ট্রেনটিও সচল হবে বলে আশা করা যায়।
চাঁদপুর ও কুমিল্লার মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে চলাচলকারী ডেমু ট্রেনটি সকাল ও বিকেল দুবার যাতায়াত করায় এ ট্রেনটির সাথে যাত্রীদের দিনে চারবার দেখা মিলতো। লোকাল ট্রেনের স্বাদ মিটতো এ ট্রেনে চড়ে। ২০২০ সালে পুরোপুরি অকেজো হবার পূর্বে ট্রেনটি কিছুদিন একবার যাতায়াত করতো। গত প্রায় দু বছর ট্রেনটি না থাকায় চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের যাত্রীরা লোকাল ট্রেনের স্বাদ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে চাঁদপুর জেলা শহরে তিনটি প্রসিদ্ধ কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এই ডেমু ট্রেন না থাকায় আর্থিক বিপাকে পড়েছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এ বিষয়ে একটি সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। আশা করি এ সংবাদের আলোকে ১৯ সেট অকেজো ডেমু ট্রেন সচল প্রক্রিয়ায় চাঁদপুর-কুমিল্লা রূটের ডেমু ট্রেনটি অগ্রাধিকার পাবে।