প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর জেলায় প্রবাসীকল্যাণ পরিষদ নামক সংগঠনটি দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি সক্রিয়। আবার চাঁদপুর জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে কচুয়া উপজেলা প্রবাসীকল্যাণ পরিষদ অন্যান্য উপজেলার চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক সক্রিয়, যার প্রমাণ তারা হোসনেআরা নামক এক বিধবা নারীকে নতুন ঘর প্রদানের মধ্য দিয়ে দিয়েছে। গত শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘরটি হোসনেআরা বেগমকে হস্তান্তর করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। টিনশেড ঘরটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ঘরটিতে রয়েছে তিনটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর ও একটি ওয়াশরুম।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নের আকানিয়া নাছিরপুর গ্রামের বাসিন্দা হোসনেআরা বেগম। তার স্বামী নজরুল ইসলাম প্রায় তিন মাস পূর্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামীই ছিলেন হোসনেআরার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্বামীকে হারিয়ে তিনি দু মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিপতিত হন। বড় মেয়ে শারমিন আক্তার (২৩)কে অনেক দুঃখ-কষ্টে পাত্রস্থ করেছেন। ছোট মেয়ে আছমা আক্তার বিয়ের উপযুক্ত হলেও আর্থিক টানাপোড়েনে পাত্রস্থ করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় সংসারের চাকা সচল রাখতে রোজগারে নেমেছে হোসনেআরার ১৬ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে রাব্বী। সে ভ্যান চালিয়ে দৈনিক দু-আড়াইশ টাকা রোজগার করে। এ টাকা সংসারের তিনজনের ক্ষুধা মেটাতেই ব্যয় হয়ে যায়। আর অন্য প্রয়োজন মিটাবে কীভাবে? যেমন- তাদের বসবাসের দোচালা বসতঘরটি মেরামতের প্রয়োজনীয়তা তারা মিটাতে পারছিলো না। একটুখানি বৃষ্টি হলে ঝপঝপিয়ে পানি পড়তো। পলিথিন টানিয়ে পানিপড়া বন্ধ করা যাচ্ছিলো না। রাতের আকাশে মেঘ দেখলেই ঘরের সকলে ভয়ে থাকতো এ কারণে যে, মনে হয় আজ সারারাত তাদেরকে বৃষ্টির পানি ঠেকিয়েই পার করতে হবে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এমন জরাজীর্ণ ঘরে বসত করাটাই দায় হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হোসনেআরার একটি ঘর পাওয়ার আকুতি ও তাদের কষ্টসাধ্য জীবনের হালচিত্র তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়া হয়, যেটি ভাইরাল হয়ে যায়। এ পোস্টটি নজরে পড়ে প্রবাসীকল্যাণ পরিষদ কচুয়া উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দের।
প্রবাসীকল্যাণ পরিষদের সভাপতি কাজী মোকলেছুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল সওদাগর জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে হোসনে আরার একটি নূতন ঘরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জানতে পেরে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আমরা সেটি পূরণের সিদ্ধান্ত নেই এবং দ্রুত নতুন ঘর বানিয়ে হোসনেআরাকে হস্তান্তর করতে সক্ষম হই। তারা বলেন, আমাদের সামান্য সহযোগিতায় অসহায় হোসনেআরা ও তার পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটেছে, যাতে আমরা তৃপ্তি ও গৌরববোধ করছি। সমাজের সকল বিত্তবান ব্যক্তি হোসনেআরার মতো অসহায় অন্যান্য পরিবারের পাশে আমাদের ন্যায় দাঁড়াবেন-এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
ফেসবুক সহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, কারো বদনাম, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা বিদ্বেষ, যৌনতা, অশ্লীলতা ইত্যাদি ছড়াতেই আমরা অধিকাংশ ব্যবহারকারীর প্রবণতা লক্ষ্য করি। এর বিপরীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে যে কতো ভালো কাজে ব্যবহার করা যায়, কচুয়ার বিধবা অসহায় হোসনেআরার জরাজীর্ণ বসতঘরের স্থলে নতুন ঘর প্রাপ্তির মধ্য দিয়েই সেটি প্রমাণিত হলো। আমরা এজন্যে প্রবাণীকল্যাণ পরিষদ কচুয়া উপজেলা শাখাকে জানাই অনেক ধন্যবাদ। আমাদের বিশ্বাস, সংগঠনটির কচুয়া শাখার এ মহৎ কাজটি সারাদেশের অন্যান্য শাখাতে ভালোভাবেই সঞ্চারিত হবে।