প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
সেপ্টিক ট্যাংকে মৃত্যু প্রসঙ্গে
সেপ্টিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে অদক্ষ শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা আমাদের দেশে প্রায়শই ঘটায় এমন ঘটনায় এখন কেউ আর অবাক হয় না, তবে বার বার ব্যথিত হয়। আর সেপ্টিক ট্যাংক বিস্ফোরণে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে বেদনায় মুষঢ়ে পড়ে সকলে। এক্ষেত্রে গেলো জুলাই মাসে ফেণীতে সেপ্টিক ট্যাংক বিস্ফোরণে তিন ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা ছিলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শুক্রবার চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুরে সেপ্টিক ট্যাংকে যে দুজন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে, সেটা কিন্তু এই ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে কিংবা ট্যাংক বিস্ফোরণে হয়নি। নূতনভাবে নির্মিত সেপ্টিক ট্যাংকের সেন্টারিং খুলতে গিয়ে অক্সিজেনের অভাবে হয়েছে। সেজন্যে এই মৃত্যুর ঘটনাটি সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে।
|আরো খবর
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় স্থানীয় নির্মাণ শ্রমিক লিটন পাঠান (৪৫) ও রাসেল প্রধান (২৮) নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের দক্ষিণে বারিগাঁও এলাকায় জনৈক আবুল বাশার মোল্লার নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনের নূতন সেপ্টিক ট্যাংকের সেন্টারিং খুলতে গিয়ে মারা যান। এদের লাশ উদ্ধারকারী পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ অক্সিজেনের অভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। মতলব থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া জানান, এ দুই নির্মাণ শ্রমিক দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত ভবনটিতে কাজ করে আসছিলেন। সেজন্যে তাদেরকে অভিজ্ঞ বলা গেলেও দক্ষ বলার সুযোগ নেই। কেননা তারা সেপ্টিক ট্যাংকে নামলে যে অক্সিজেনের ঘাটতিতে পড়তে হতে পারে সে সম্পর্কে পূর্ব ধারণার অধিকারী ছিলেন না।
সেপ্টিক ট্যাংক হচ্ছে মানুষের মল-মূত্র জমা রাখার জন্যে ভূগর্ভে নির্মাণ করা আধার। বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টিক ট্যাংকের ভেতরে জৈব পদার্থ পচনের কারণে তৈরি হয় মিথেন ও হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো গ্যাস। এ অবস্থায় ট্যাংকের ভেতরে ঢুকলে অক্সিজেনের প্রবল ঘাটতি দেখা দেয় এবং তাতে মৃত্যু ঘটে। আর যে কোনো দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে আসলে সেপ্টিক ট্যাংকে হতে পারে বিস্ফোরণ।
সেপ্টিক ট্যাংক সংক্রান্ত দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ-৩ অধিশাখা ২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি এক পরিপত্র জারি করে, যেটিতে স্বাক্ষর করেন অতিরিক্ত সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন। এটির সূচনায় লিখা হয়, নগর ও শহরাঞ্চলে আবাসিক/বাণিজ্যিক ভবনের সেপ্টিক ট্যাংক সমূহ পরিষ্কারকরণ ও ব্যবস্থাপনায় অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ ও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন না করার ফলে প্রায়শই নিয়োজিত শ্রমিকবৃন্দ দুর্ঘটনার শিকার হন এবং তাদের প্রাণহানি ঘটে। এ দুর্ঘটনা রোধে উক্ত পরিপত্রে ১০টি নির্দেশনা দেয়া হয়। সেমতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ‘সেপ্টিক ট্যাংক পরিষ্কার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল’ তৈরি করা হয়। কিন্তু উক্ত পরিপত্রের ব্যাপক প্রচারণা এবং ম্যানুয়াল অনুযায়ী প্রশিক্ষণ যে খুব বেশি হয়েছে সেটি বলা যায় না। যদি হতো, তাহলে সেপ্টিক ট্যাংক সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অনেক কমে যেতো। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট থেকে কাঙ্ক্ষিত সক্রিয়তা প্রত্যাশা করছি। কারণ সেপ্টিক ট্যাংক সংক্রান্ত মৃত্যুকে যে কোনো মানুষের জন্যে অসম্মানজনক, দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুছাড়া অন্য কিছু বলার সুযোগ যেনো নেই।