প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

এক সময় আমাদের দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ তাদের সহকর্মী সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার সকল স্তরের মানুষের কাছে আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হতেন। এর ফলে এঁরা কমিউনিটি লিডারে পরিণত হতেন। এঁদের অনেকেই জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত নির্বাচিত হয়ে যেতেন বিনা ক্লেশে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক পাঠদানকে ব্রত হিসেবে মনে করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা প্রশ্নাতীতভাবে সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হয়েছেন। এ কথা বলার ন্যূনতম অবকাশ নেই যে, শিক্ষকরা এখন আর শ্রদ্ধেয় নেই। তবে এ কথা বলা যায় যে, শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধার হার কমেছে কিছু সংখ্যক অসাধু ও লোভী শিক্ষকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে। তারপরও অধিকাংশ শিক্ষক অবশ্যই শ্রদ্ধেয়, বরণীয় কিংবা পূজনীয়। শিক্ষকদের এমন অবস্থা ধরে রাখার প্রয়াস আন্তরিকভাবে চালিয়ে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।
কিছু শিক্ষকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পেছনে অনুসন্ধান চালালে জানা যায় যে, এদের নিয়োগই হয়েছে বিতর্কিতভাবে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এরা তদবির করে কিংবা ঘুষ দিয়ে নিয়োগ পেয়েছে। এদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ অর্জনের প্রেক্ষাপটও নকলনির্ভর কিংবা তদবিরনির্ভর। এদের মধ্যে নেই মানবিক গুণাবলি। এরা নিজেরাই মানুষের মতো মানুষ না হয়ে মানুষ গড়ার কারিগর হয়েছেন। সেজন্যে এরা যে কোনো অন্যায় কাজ করতে বিব্রতবোধ করে না। কিন্তু সেটা যদি সীমাহীন বা মাত্রাতিরিক্ত হয়, তাহলে তো শিক্ষক সমাজের মাথা নত হবার উপক্রম হয়। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ চুরির অভিযোগ’ শীর্ষক সংবাদ দেখে নিশ্চয়ই শিক্ষক সমাজের মাথা নত বা বিব্রত হবার উপক্রম হয়েছে।
এই শিক্ষক হচ্ছেন ফরিদগঞ্জের গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির হোসেন। তার বিরুদ্ধে সরকারের বন বিভাগের ছোট-বড় ফলদ-বনজ ১৭টি গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এ গাছগুলো রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া বাজারের দক্ষিণ ডিসি সরকারি খাল ও সড়কের মাঝখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন সরকারি সম্পত্তির ওপর লাগানো হয়েছিল। খবর পেয়ে গত ৩ আগস্ট বন বিভাগের কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ওইদিন রাতেই উক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বনবিভাগের কর্মকর্তার হিসেবে কেটে ফেলা ১৭টি গাছের বাজার মূল্য মাত্র এক লাখ টাকা। একজন প্রধান শিক্ষক এই সামান্য টাকার লোভে বাড়ন্ত কিছু গাছ কেটে যে বিরূপ সমালোচনার শিকার হয়েছেন এবং গণমাধ্যমের সংবাদের উপজীব্য হয়েছেন, সেটা শুধু দুঃখজনক নয়, গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যে লজ্জাজনক। আমরা মনে করি, এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার শিক্ষকতা পেশায় থাকার নৈতিক অধিকার সম্পূর্ণ ক্ষুন্ন হবে। সেজন্যে তার পদাবনতি কিংবা চাকুরিচ্যুতি বাঞ্ছনীয় হবে। আমরা মনে করি, শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালানো যে কোনো শিক্ষকের প্রতি কর্তৃপক্ষের শূন্য সহনীয় মাত্রা (জিরো টলারেন্স) প্রদর্শন জরুরি।