প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪১
পরকীয়া প্রেমে মুহুর্তেই লণ্ডভণ্ড ইসমাইলের সংসার
শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের আহম্মদ নগর গ্রামের ছোট পোদ্দার বাড়ির ইসমাইল হোসেন। তার স্ত্রী এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে তার সুখের সংসার। তার সংসার ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। প্রতিমাসে এমনকি জরুরি প্রয়োজনে অর্থ ও যোগাযোগের মাধ্যমে আগলে রেখেছিলেন তার প্রাণের সংসার। কখনোই কষ্ট অনুভব করতে দেননি তার স্ত্রী ও সন্তানদের।
|আরো খবর
তার স্ত্রী তাহসিনা সুলতানা রুমি, মেয়ে রওনোজ আফরিন প্রিয়া ও ছেলে আল দিয়া পরশ। সংসারের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসার টানে ১৭ বছর পূর্বে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সৌদি আরবে নিয়ে যান। শিশু প্রিয়াকে কোলে নিয়ে রুমি পাড়ি দেন প্রবাসে, সেখানেই জন্ম হয় পরশের। ইসমাইল হোসেন তখন আদর করে তার সন্তানের নাম রাখেন আল দিয়া।
সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে আসেন ইসমাইল হোসেন। সময়ের ব্যবধানে পরশ এখন অনেক বড় হয়েছে আহম্মদ নগর আলীম মাদ্রাসা থেকে সে এবার দাখিল পরীক্ষার্থী। আর প্রিয়া একই মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষার্থী।
এদিকে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায় হৃদয়ের সাথে পারিবারিকভাবেই প্রিয়ার বিয়ে হয়। ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রিয়ার কোল আলো করে জন্ম হয় আনহার। বিয়ের পর প্রিয়া শ্বশুর বাড়ি কুমিল্লায় বসবাস করলেও সন্তান সম্ভাবা হওয়ার পর প্রিয়া শাহরাস্তির বাবার বাড়িতেই বেশি থাকতেন।
শিশু আনহার জন্ম হয় শাহরাস্তিতে। সন্তান হওয়ার পর প্রিয়া বাবার বাড়িতেই বেশি থাকতো। ইসমাইল হোসেন দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর দেশে আসেননি। স্ত্রীর প্রতি অভিমান করেই তিনি পরিবার থেকে দূরে থাকছেন। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের ভালোবাসার টানে প্রতিটি মুহূর্তেই যোগাযোগ রেখে চলেছেন ইসমাইল। বুকে পাথর চেপে নিজের সংসার সুখে রাখতে প্রবাসে বসে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ইসমাইল। কিন্তু হঠাৎ করেই ইসমাইলের ছোট্ট সুখের সংসার তছনছ হয়ে গেল। একটি ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল তার সুখের স্বপ্ন। তার পরিবারের সদস্যরা এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
১৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার আদরের মেয়ে খুন হওয়ার পর তার সুখের সংসারে চিড় ধরা শুরু হয়। প্রবাসে বসে তার সাজানো-গোছানো সুখের সংসার তিলে তিলে ধ্বংস হতে দেখে ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ইসমাইলের।
১৬ সেপ্টেম্বর আদরের মেয়ে প্রিয়া খুন হওয়ার পর ২৩ সেপ্টেম্বর তার স্ত্রীর আদালতে স্বীকারোক্তি। দেশবাসীকে অবাক করলেও ইসমাইলকে করছে বাকরুদ্ধ। প্রবাসে বসে দিশেহারা ইসলাইল এখন একমাত্র ছেলে ও নাতিনের ভবিষ্যতে নিয়ে ব্যকুল। প্রবাসে থাকা পিতা, জেলে থাকা মা, আর চোখের সামনে কবরে শুয়ে থাকা বোনকে ফেলে ভাগনি আনহারকে বুকে জড়িয়ে কষ্ট ভুলে থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিয়া হোসেন পরশ। আহমদ নগরের ছোট পোদ্দার বাড়িটি এখন শুধুই শুনসান নীরবতা।
২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়িতে গিয়ে কথা হয় পরশের সাথে। সে জানায়, তার বোন প্রিয়া হত্যার জন্য হান্নান দায়ী তবে মায়ের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না পরশ। সবসময়ই বাবা-খোঁজ খবর রাখছেন। একা এই বাড়িতে থাকা সম্ভব হবে না, তাই কুমিল্লায় ভগ্নিপতির সাথেই চলে যাবে সে।
প্রিয়ার স্বামী হৃদয় ও তার মা এখনো শাহরাস্তিতে রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চলছেন তারা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শে তারা এখনো শাহরাস্তিতে রয়েছেন।
হৃদয় জানান, এ ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক না কেন, তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিৎ। সে জানায়, আনহারকে তার মায়ের আদর বুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে। তার স্ত্রীর সাথে তার সুসম্পর্ক ছিলো বলে সে জানায়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খিলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদুল ইসলাম জানান, মামলার রহস্য উন্মোচন হওয়ার ভালো লাগছে। ২৬ সেপ্টেম্বর রোববার আসামি হান্নানকে রিমান্ডে আনতে আদালতে আবেদন করা হবে। তারপর বিস্তারিত জানা যাবে।