প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০
যদি সেটি সত্যি হয়, তাহলে আপত্তিকর
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘নৌ পুলিশের হয়রানি বন্ধে জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে জেলেদের লিখিত আবেদন’ শিরোনামের সংবাদে লিখা হয়েছে, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সরকারি অভিযানবিহীন জেলেদের মৎস্য আহরণে নৌ পুলিশ কর্তৃক হয়রানি বন্ধে জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা।
শুক্রবার ১৫ নভেম্বর বিকেলে তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার বহরিয়া হাই স্কুল মাঠে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন আয়োজিত কর্মী সভায় উপস্থিত হলে স্থানীয় জেলেদের একটি দল জেলা বিএনপির শীর্ষ এই নেতার কাছে তাদের অভিযোগ সম্বলিত আবেদনটি তুলে দেন।
অভিযোগে বলা হয়, আমরা চাঁদপুরে সাধারণ জেলে নদীতে মৎস্য আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি। গত বাইশ দিনের মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আইন মেনে পালন করেছি।নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরতে গেলে নৌ পুলিশ নৌকা, জাল, এমনকি মানুষ পর্যন্ত আটক করে বিকাশে মোটা অংকের টাকা দাবি করে এবং টাকার বিনিময়ে আমরা ছাড়া পাই। আমরা যাতে পুলিশি হয়রানি হতে রক্ষা পেয়ে নির্বিঘ্নে নদীতে জাল বাইতে পারি এবং জীবিকা নির্বাহ করতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দিলে আমরা গরিব জেলেরা কোনো রকম জীবনযাপন করতে পারবো। উক্ত বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতির সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা। এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে নৌ পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
নদীতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের কম দৈর্ঘ্যের ইলিশ মাছ বা অন্য মাছ বছরের যে সময়টাতেই ধরা হোক না কেনো, সেটা দেশে বিদ্যমান মৎস্য আইনে অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে কোনো মাছের রেণু, পোনা যে কোনো ধরনের জাল দিয়ে ধরা সব সময়ের জন্যে নিষিদ্ধ ও অবৈধ। কারেন্ট জাল ছাড়াও আরো কিছু নিষিদ্ধ সরঞ্জাম আছে, যেগুলো দিয়ে জেলেদের মাছ ধরায় মানা আছে। এসব জেনেও যদি কিছু অসাধু জেলে নদীতে অবৈধ উপায়ে মাছ ধরতে যায়, সেটা মার্চ-এপ্রিলের জাটকা মৌসুমের এবং অক্টোবর-নভেম্বরের মা ইলিশ সংরক্ষণের ২২দিনের অভয়াশ্রম চলাকালীন হোক কিংবা অন্য সময়ে হোক, তাহলে তাতে নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড ও মৎস্য বিভাগ দ্বারা প্রতিহত হওয়াটা সংগত। এর বাইরে নদীতে জেলেরা যদি বৈধভাবে মাছ ধরতে যায়, তাহলে সেখানে নৌ পুলিশ বা কোস্ট গার্ডের কারো দ্বারা বাধাগ্রস্ত হওয়াটা আপত্তিকর, যেটি জেলেরা চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতির কাছে লিখিত আবেদনে জানিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপারের তদন্ত বা পর্যবেক্ষণ এবং সে আলোকে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করছি।
গেল ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ২২দিন মেঘনা, পদ্মাসহ আরো কিছু নদীতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চলাকালে নৌপুলিশের কিছু অসাধু ব্যক্তির অনিয়মের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সে ব্যাপারেও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত সাপেক্ষে বক্তব্য আসা দরকার। এক্ষেত্রে মৌনতা সত্যতার নামান্তর হতে পারে। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশ নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা, মনোবল বৃদ্ধির প্রয়োজনে ঘুষ খাওয়া সহ আরো কিছু অনিয়মের আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে বলে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে। কিন্তু সে প্রত্যাশা যদি পূরণ না হয়, তাহলে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সুযোগ বুঝে বিস্ফোরণের রূপ ধারণ করতে পারে। এ বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন থেকে অধঃস্তন পর্যায়ের কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের খেয়াল রাখা উচিত বলে আমরা মনে করি।