শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৩

তাল গাছ কেটে বাবুই পাখির বাসা নষ্ট

মো. শামীম মিয়া
তাল গাছ কেটে বাবুই পাখির বাসা নষ্ট

বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশে তাল গাছ এক অমূল্য সম্পদ। এই গাছ শুধু আমাদের জীবনের প্রয়োজনীয় ছায়া-আলোর মাধ্যম নয়, বরং প্রকৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। তাল গাছের শাখায় বাস করে অসংখ্য পাখি, বিশেষ করে বাবুই পাখি, যারা এই গাছকে তাদের আশ্রয় ও প্রজননের স্থান হিসেবে বেছে নেয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত, সাম্প্রতিক সময়ে তাল গাছ কেটে ফেলা এবং অবৈধভাবে তাল গাছের বন উজাড়ের কারণে বাবুই পাখিদের বাসস্থান নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে এবং প্রকৃতির এক অপূরণীয় ক্ষতি ঘটছে। তাল গাছের গুরুত্ব আমাদের পরিবেশের জন্য অপরিসীম। এই গাছগুলো মাটির ক্ষয়রোধে সাহায্য করে, ভূমিধস রোধ করে এবং জলাধার রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এছাড়া তাল গাছের ডালপালা ও পাতা নানা প্রজাতির পাখি ও প্রাণীর খাদ্য ও আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। বাবুই পাখি বিশেষ করে তাল গাছের উপর নির্ভরশীল। তারা গাছে গাছে বাসা বাঁধে, যেখানে তারা নির্ভয়ে ডিম পাড়ে ও তাদের সন্তান পালন করে। বাবুই পাখিদের এই বাসস্থলগুলো হারানোর মানে তাদের অস্তিত্ব সংকটাপন্ন হওয়া। দুঃখজনক বিষয় হলো, তাল গাছের বন উজাড়ের ফলে বাবুই পাখির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, গাছগুলো কাটা হয় আগুন জ্বালানো, নির্মাণ কাজ, বা কৃষিজমি সম্প্রসারণের জন্য। কিছু ক্ষেত্রে কৃষকরা তাল পাতা ও গাছের কাঠ বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের জন্যও গাছ কেটে ফেলে। যদিও এটা একটি অস্থায়ী সুবিধা, দীর্ঘমেয়াদে এই কর্মকাণ্ড প্রকৃতিকে মারাত্মক ক্ষতি করছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ভূমিধস, খরা ইত্যাদির ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, যা মানবজীবনকেও সরাসরি প্রভাবিত করে।

তাল গাছ ও বাবুই পাখির বাসস্থান রক্ষা করা শুধুমাত্র পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয় নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের গ্রাম ও শহরের পরিবেশ সুন্দর রাখতে হলে প্রথমেই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। এই জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশের জন্য দায়বদ্ধ দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের করণীয় শুরু হতে পারে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। গাছ কাটার আগে ভাবতে হবে, সেই গাছের ওপর কত প্রাণ নির্ভরশীল। তাল গাছ কেটে বাবুই পাখির বাসা নষ্ট করাটা শুধু একটা বৃক্ষনাশ নয়, এটি প্রকৃতির এক জীবন্ত ঘর ও প্রাণের আশ্রয় বিনষ্ট করার সমতুল্য। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা এবং জনগণ একযোগে কাজ করে অবৈধ কাটাছেঁড়া বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া, গাছ লাগানোর বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা গাছ কাটে, তাদের একই সঙ্গে নতুন গাছ রোপণের প্রতি উৎসাহিত করা উচিত। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সামাজিক সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গাছ লাগানোর মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে পারে। গাছ লাগানো শুধু পরিবেশে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে না, বরং সেটি নানা জীবজন্তুর জন্য বাসস্থল তৈরি করে। তাল গাছ ও বাবুই পাখির বাসস্থান রক্ষায় আমাদের ছোট ছোট উদ্যোগ বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। যেমনÑগ্রামে বা শহরে তাল গাছ রোপণ করা, শিশুদের পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া, সামাজিক মিডিয়ায় সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। এসব প্রচেষ্টা পরিবেশ রক্ষায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

পরিশেষে বলা যায়, পরিবেশ রক্ষা একটি সমষ্টিগত দায়িত্ব। গাছ কাটার পেছনে থাকা স্বার্থপরতা থেকে বেরিয়ে এসে প্রকৃতির প্রতি সম্মান জানাতে হবে। শুধু আমাদের সন্তানের জন্য নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও একটি সুস্থ ও সবুজ পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাল গাছ ও বাবুই পাখির বাসস্থান রক্ষা করি। পরিবেশের প্রতি যত্নবান হই, প্রকৃতিকে বাঁচাই এবং আমাদের ভবিষ্যত সুদূরপ্রসারী করি। আমাদের একাগ্র প্রচেষ্টাই পারবে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়