প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৮
হাজীগঞ্জে অপ-চিকিৎসায় বাক্ প্রতিবন্ধী শিশুর হাতে পচন
হাজীগঞ্জে অপ-চিকিৎসায় বাক্ প্রতিবন্ধী আরাফাত হোসেন (১০) নামের শিশুর হাতে পচন ধরেছে। ইতিমধ্যে শিশুটির পচনকৃত হাতের দুই আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে। শিশুটির পরিবারের আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত হাতটি কেটে ফেলা ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে শিশুটি রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।
|আরো খবর
শিশুটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং পূর্ব গুপ্টি ইউনিয়নের মানুরী নোয়া বাড়ির মোঃ হাছান মিয়ার ছোট ছেলে। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। তার বাবা ইটভাটার শ্রমিক। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর শিশুটি খেলতে গিয়ে তার হাত ভেঙ্গে যায়। এরপর হাজীগঞ্জ বাজারে কথিত এক চিকিৎসকের কাছে প্লাস্টার ও চাঁদপুুর সদর উপজেলার মৈশাদী গ্রামের এক কবিরাজের অপ-চিকিৎসায় শিশুটির হাতে এই পচন ধরেছে।
ইতিমধ্যে শিশুটির বাবা মোঃ হাছান মিয়া কথিত হাজীগঞ্জ বাজারের সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম সোয়েব আহমেদ চিশতীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে শিশুটির বাবা ঐ অভিযোগে কবিরাজের কথা উল্লেখ করেন নি।
শিশুটিকে প্রথম দেয়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায় মোঃ আলাউদ্দিন ডাক্তার পরিচয়ে হাজীগঞ্জ বাজারের ডিগ্রি কলেজ রোডস্থ জান্নাত ফার্মেসীতে প্রতিদিনি সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত (সোমবার বন্ধ) রোগী দেখেন। তিনি ডি.এম.এফ (ঢাকা), বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ এক্স.এফ.টি (জেনারেল হাসপাতাল, কুমিল্লা), জেনারেল ফিজিসিয়ান, বিএমএন্ডডিসি রেজিষ্ট্রেশন নং- ডি-২০৭৩৯ উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিশু আরাফাত একজন বিশেষায়িত প্রতিবন্ধী। গত ৩ ডিসেম্বর বাড়িতে অসাবধনাতবশত তার হাত ভেঙ্গে যায়। আর্থিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে না নিয়ে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ জান্নাত ফার্মেসি নিয়ে আসলে মোঃ আলাউদ্দিন নিজেকে ডাক্তার পরিচয়ে শিশুটিকে চিকিৎসা সেবার নামে প্লাস্টার ও প্রেসক্রিপসনসহ অপ-চিকিৎসা দেন। এতে করে শিশু আরাফাতের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে গেলে তাকে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে নেয়া হয়।
বর্তমানে শিশুটির হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে এবং সম্পূর্ণ হাত কেটে ফেলার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকগণসহ তার পরিবার।
এ দিকে শিশুটিকে জান্নাত ফার্মেসিতে চিকিৎসার দেয়ার পর বাড়িতে নিয়ে আসলে অসহ্য ব্যথার কারণে ৫ ডিসেম্বর ব্যান্ডেজ খুলে দেন তার চাচাতো ভাই কামরুজ্জামান কায়েসসহ শিশুর পরিবারের লোকজন। এরপর তাকে মৈশাদী এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ৯ ডিসেম্বর বাড়িতে আনার পর ওই দিনই জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান কামরুজ্জামান কায়েস।
শিশুটিকে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কথিত সেই চিকিৎসক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, আমার কাছে নিয়ে আসার পর আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শিশুটিকে কুমিল্লা রেফার করি। কিন্তু শিশুটিকে কুমিল্লা না নিয়ে মৈশাদী এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায় তার পরিবারের লোকজন। অথচ তারা এখন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, নিয়ম মেনেই নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করছি।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম সোয়েব আহমেদ চিশতী জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (সিভিল সার্জন) সাথে কথা বলেছি এবং তদন্ত করা হচ্ছে। পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে কথা বলেছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।