রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৯:২৪

ফলাফল প্রকাশে বোর্ডের চাঞ্চল্যকর গড়মিল!

"একটায় ফেল, আরেকটা ফ্রি!"

এসএসসি পরীক্ষার ফলে বোর্ডের অদ্ভুতুড়ে ভেলকি!

বিশেষ প্রতিবেদক :মো.জাকির হোসেন
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জিৎ চন্দ্র মহন্ত। ছবি : সংগৃহীত

“এক বিষয়ে পরীক্ষা দিলেও ফলাফল এসেছে দুই বিষয়ের — এবং দুটিতেই ফেল!” — এমন বিভ্রান্তিকর এবং হতবাক করা অভিযোগ উঠে এসেছে দেশের একাধিক শিক্ষা বোর্ডে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর। শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, কিন্তু ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তারা সেই বিষয় ছাড়াও আরও একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে ফেল করেছে, যা তারা আদৌ পড়েনি বা পরীক্ষা দেয়নি।

ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে রাজশাহী বোর্ড-এর অধীন দিনাজপুরের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। পরবর্তীতে একই রকম অভিযোগ পাওয়া গেছে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম বোর্ডেও। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছে, তারা জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে কিন্তু ফলাফলে দেখা গেছে তারা জীববিজ্ঞান ও অর্থনীতি — উভয় বিষয়ের ফল পেয়েছে, এবং দুটিতেই ফেল দেখানো হয়েছে!

সজলের গল্প: "অর্থনীতি তো আমাদের গ্রুপেই নেই!"

চট্টগ্রামের এক স্কুলের মানবিক বিভাগের ছাত্র সজল হোসেন বলেন, “আমি ইতিহাস, পৌরনীতি, ইসলামের ইতিহাস নিয়েছি। কিন্তু রেজাল্টে দেখি অর্থনীতি ও কৃষিশিক্ষায় ফেল! অথচ এই বিষয়গুলো আমি কখনো পড়িইনি।” তার কথায় বোর্ডের ফলাফল তৈরি প্রক্রিয়ায় গুরুতর ত্রুটির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

রোল ও সাবজেক্ট কোড মিশ্রণের অভিযোগ

একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক জানিয়েছেন, বোর্ডের তথ্য এন্ট্রিতে ভুল বা "subject mapping"-এ গড়মিলের কারণে এক শিক্ষার্থীর ফল অন্য সাবজেক্ট কোডে চলে যাচ্ছে। এতে একটি বিষয়ের নাম থাকলেও রেজাল্টে অন্য বিষয় যুক্ত হয়ে যাচ্ছে, তাও আবার ফেল সহকারে!

"একটি পরীক্ষার খাতা দুই বিষয়ে মূল্যায়ন কীভাবে হয়? প্রশ্ন তুলেছে অভিভাবক সমাজ।" অনেকেই বলছেন, এটি শুধু ত্রুটি নয় — এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মতো অপরাধ।

শিক্ষাবোর্ডের বক্তব্য: "বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে"

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি। ফলাফলের সফটওয়্যারে ডেটা এন্ট্রি বা কোডিংয়ে কোথাও ভুল হলে তা যাচাই করে সংশোধন করা হবে।” তবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সংশোধনের উদ্যোগ না নিলে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা ভর্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

শিক্ষাবিদদের উদ্বেগ: “ফলাফলে এমন গড়মিল জাতির জন্য ভয়ংকর সংকেত”

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, “এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে ফেল দেখানো শুধু প্রযুক্তিগত ভুল নয়, এটি শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করে। শিক্ষার্থীরা হতাশ হবে, সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াবে।” তিনি জানান, বোর্ডগুলোর উচিত প্রতিটি ফলাফল প্রকাশের আগে বহুমাত্রিক যাচাই নিশ্চিত করা।

দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে ফলাফল সংশোধনের দাবি

ফলাফল নিয়ে এই অনিয়মের ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শিক্ষা বোর্ডগুলো দ্রুত তদন্তপূর্বক দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা বাড়বে। একইসঙ্গে সঠিক ফল প্রকাশ না হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও ক্যারিয়ারে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে।

বিশেষ অনুরোধ: যেকোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক যদি এমন সমস্যায় পড়েন, তাহলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড অফিসে অভিযোগপত্র দিয়ে লিখিতভাবে জানাতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়