সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৯

এডি দিদারুল: বদলির নামে অপকর্মের বিস্তার, এবার কক্সবাজারে নতুন কেলেঙ্কারি

অভিযোগের পাহাড়, বদলির পরও অপরাধ থামে না!

বিশেষ প্রতিবেদন. মো. জাকির হোসেন
অভিযোগের পাহাড়, বদলির পরও অপরাধ থামে না!
ছবি : সংগৃহীত

দেশজুড়ে আলোচিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সহকারী পরিচালক (এডি) একেএম দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে আবারও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। চাঁদপুর ও জামালপুরের পর এবার কক্সবাজারে তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনগণ, রাজনৈতিক মহল ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

গত ৯ মার্চ কক্সবাজারে সাংবাদিক শাহিন মাহমুদ রাসেল একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে এক নারী অভিযোগ করেন যে, তাঁর স্বামী, সিএনজি চালক বজল করিম, মাদকের মামলায় ফাঁসানোর শিকার হয়েছেন। পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে, এডি দিদারুল আলম তা ধামাচাপা দিতে রাতারাতি ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে, পূর্বে আটক এক আসামিকে দিয়ে সাংবাদিক রাসেলের বিরুদ্ধে লাইভ প্রচার করানো হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "একজন আসামি শত্রুতাবশত বা পুলিশি চাপে যেকোনো ব্যক্তির নাম বলতে পারেন। এ ধরনের প্রচার আইনসিদ্ধ নয়।"

দিদারুলের ‘অপকর্মের মডেল’—একই কৌশল, ভিন্ন শহর

এডি দিদারুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। চাঁদপুরে থাকাকালীন সময়ে তিনি মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতেন। অভিযোগ উঠেছিল, তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের হয়ে কাজ করতেন এবং বদলির পরও তাঁর এই নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকত।

জামালপুরে বদলির পরও তাঁর অনিয়ম থামেনি। যৌনপল্লিতে অভিযান চালিয়ে টাকা নিয়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া, দলবল নিয়ে রাতের আঁধারে গোপন বৈঠক, এবং ফাঁসানোর অভিযোগ ছিল নিয়মিত ঘটনা।

একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "দিদারুল আলম মাঠপর্যায়ের অফিসারদের টাকা তুলতে চাপ দেন। কেউ রাজি না হলে বদলির ভয় দেখানো হয়।"

গণমাধ্যমের ওপর হামলা: মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর হুমকি

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মামলা দিয়ে হয়রানি করা এখন দিদারুলের নিয়মিত কর্মকাণ্ডে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা দিদারুলের অপসারণ দাবি করেছেন। প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, "যদি একজন সাংবাদিককে এভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়, তবে তা পুরো মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য হুমকি।"

সাংবাদিকদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকেরাও দিদারুলের দুঃশাসনের শিকার হচ্ছেন। মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে আসল অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিরীহ ব্যক্তিদের ফাঁসানো তাঁর অন্যতম কৌশল বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশাসনের পদক্ষেপ কী?

এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (ডিএনসি) কাজী গোলাম তওসিফ বলেন, "এই ধরনের ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

এদিকে, ডিএনসির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মমতাজ তানভীর বলেন, "আইনগত ভিত্তি ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা যাবে না। এই অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।"

জনরোষ: ‘অবিলম্বে অপসারণ করুন’

কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো দিদারুলের অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, "এডি দিদারুলের মতো কর্মকর্তাদের কারণে প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। আইনের রক্ষক হয়ে তিনি যদি অপরাধী হয়ে ওঠেন, তবে সাধারণ নাগরিক কোথায় যাবে?"

এখন দেখার বিষয়, দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে এত অভিযোগের পরও প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়? নাকি আরও একবার, বদলির মাধ্যমে এই বিতর্কিত কর্মকর্তার অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়া হবে?

এডি দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলেও, এখনো তিনি বহাল তবিয়তে কক্সবাজারে রয়েছেন। জনমতের চাপে প্রশাসন আদৌ কঠোর ব্যবস্থা নেবে কি না, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়