মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১০

দুমাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে জাল ফেলেছেন জেলেরা

মিজানুর রহমান
দুমাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে জাল ফেলেছেন জেলেরা

ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মার্চ-এপ্রিল দুমাস অভয়াশ্রমে সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর আজ থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ সকল ইলিশ অভয়াশ্রমের নদীতে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে পারায় তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সরেজমিনে চাঁদপুর সদর উপজেলার মেঘনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে জানা গেছে, গত দুমাস চাঁদপুরসহ দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে ইলিশের পোনা জাটকা সংরক্ষণের জন্যে সকল প্রকার মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য বিভাগ। এতে করে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকার অভায়শ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকার কারণে জেলার প্রায় ৪৩ হাজার জেলে বেকার হয়ে পড়ে। এ সময় জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকতে নিবন্ধিত জেলেদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেয় সরকার। সরকারের বরাদ্দকৃত জেলে চাল মে মাসেরটা এখনো বিতরণ হয়নি। তবে শুধু চাল দিয়ে সংসার চালানো কষ্টের বলে দাবি জেলেদের। তাই খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তারও দাবি ছিলো তাদের।

আজ পয়লা মে থেকে নদীতে মাছ ধরা শুরু হওয়ায় চাঁদপুর সদরের ইব্রাহিমপুর সাখুয়া খাল, হরিণা ফেরিঘাট, আখনেরহাটসহ অন্যান্য এলাকার জেলেরা মঙ্গলবার সারাদিন নৌকা তৈরি, মেরামত ও জাল বোনাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করতে দেখা যায়। এসব এলাকার জেলেরা বলছে, নিষেধাজ্ঞা শেষে ১মে থেকে নদীতে মাছ ধরতে বাধা নেই। আমরা জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামবো, আল্লাহ যদি কিছু ইলিশ দেয়। তাতে জ্বালানি খরচ না উঠলে এই সময় নদীতে গিয়েও লাভ হবে না। কারণ এখনতো ইলিশের সিজন না। বৃষ্টি-বাদল নেই, নদীতে ভরপুর পানিও নেই। তারপরেও ইলিশ পাবার আশায় নতুন উদ্যমে নদীতে মাছ শিকারে নেমেছেন তারা।

হানারচর ইউনিয়নের রাঢ়ি বাড়ি খাল এলাকার জেলে ইউসুফ মাঝি জানান, নদীতে কাক্সিক্ষত মাছ পেলে পেছনের ধার ধেনা পরিশোধ করবো আগে। পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো ভাবে কোরবানির ঈদ করতে পারবো।

এদিকে এতোদিন যেসব আড়তে ছিল সুনসান নীরবতা সেসব আড়ত জেলে, মৎস্যজীবী ও আড়তদারদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে। মাছ ধরে বিগত দিনের ধার-দেনা শোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে আশাবাদী জেলেরা।

চাঁদপুর ইলিশ অবতারণ কেন্দ্র বড় স্টেশন মাছঘাটের আড়তদার ও ইলিশ চালানী মেজবাহ মাল জানান, সরকারের আইন মেনে তারা দীর্ঘদিন আড়তে মাছ বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন। আজ থেকে জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ায় তারাও আড়ত খুলে বসেছে। জেলেদের জালে মাছ উঠলে একদিকে যেমন জেলেরা লাভবান হবে অন্যদিকে তাদেরও আয় ভালো হবে বলে জানান আড়তদাররা।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, দুমাস মাছ শিকার বন্ধ থাকায় তাদের অভিযান সফল হয়েছে। এতে করে আগামীতে ইলিশসহ অন্যন্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, নিষেধাজ্ঞার মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে সর্বমোট ৫৭৫টি অভিযান, ১২৮টি মোবাইল কোর্ট, ৩৩৪টি মামলা হয়েছে। দুই মাসের অভিযানে তিন শতাধিক জেলেকে কারাগারে পাঠানোর পাশাপাশি প্রায় ৩ মেট্রিক টন জাটকা ও প্রায় ৩০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে জাটকা নিধন প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌপুলিশ সমন্বিতভাবে নদীতে দিনে এবং রাতে অভিযান পরিচালনা করে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আবু কাউসার দিদার বলেন, সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে এ বছর অভিযান অনেক ভালো হয়েছে। নদীতে প্রচুর পরিমাণে জাটকা বিচরণ করতে দেখেছি। যা সাগরে ফিরে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে প্রজননের উদ্দেশ্যে আবার নদীতে ফিরে আসবে। আশা করি এ বছর ইলিশের উৎপাদনের ধারা অব্যাহত থাকবে এবং তা ৬ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়