প্রকাশ : ০২ মে ২০২২, ২১:৪৬
এক জেলায় তিন ঈদ!
টানা তিন দিন পৃথক পৃথক স্থানে পৃথকভাবে ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেছে মুসল্লীরা। হয়েছে পৃথক ঈদের জামায়াত, শিশু-কিশোরা পড়েছে নতুন পোশাকও। জেলাটির নাম চাঁদপুর। চাঁদ ওঠা নিয়ে বিতর্ক থাকায় এ বছর (২০২২ সাল) ১, ২ ও ৩ মে টানা তিন দিন ভিন্ন মতাদর্শের মুসল্লীরা ঈদ উদযাপন করে।
|আরো খবর
১ মে (রবিবার) জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফের একাংশ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। প্রথম চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে এবং ভোররাতে ঘোষণা দিয়ে রবিবার (১ মে) হাজীগঞ্জের সাদ্রা হামীদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদারাসা মাঠে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ওই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন সাদ্রার মরহুম পীরের ছেলে মুফতি জাকারিয়া আল মাদানী।
মুঠোফোনে চাঁদপুর কণ্ঠকে তিনি বলেন, শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আফ্রিকার দেশ নাইজার, মালি ও এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানে চাঁদ দেখার খবর পাই। এরপর তা যাচাই-বাছাই করে ভোররাতে আমরা ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছি ও ঈদ পালন করেছি। তিনি আরো বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা ঈদ উদযাপন করে থাকি। ফলে সর্বপ্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখি এবং ঈদ উদযাপন করি। তাই আমাদের এখানে সকাল সাড়ে ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অপরদিকে সোমবার (২ মে) সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে হাজীগঞ্জের ৪০ গ্রামের কিছু সংখ্যক মুসল্লি ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফ সংলগ্ন সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাতে ইমামতি করেন আগাম ঈদের প্রবক্তা সাদ্রা দরবারের পীর মাওলানা আরিফ বিল্লাহ চৌধুরী।
চাঁদপুর কণ্ঠকে পীর মাওলানা আরিফ বিল্লাহ চৌধুরী জানান, চাঁদ দেখার ভিত্তিতে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখি এবং ঈদ উদযাপন করি। রবিবার মধ্যপ্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেছে। তাই মুসলিম বিশ্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ৩০ রোজা শেষ করে আমরাও তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছি।
সাদ্রাসহ ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হলো, হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, দক্ষিণ বলাখাল, শ্রীনারায়নপুর, মনিহার, বড়কুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর। ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাসারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। যদিও গ্রামের অধিকাংশ মুসল্লীই আগাম ঈদ করা থেকে বিরত ছিলেন।
দেশের আকাশে চাঁদ দেখা যাওয়ায় মঙ্গলবার (৩ মে) রাষ্ট্রীয় ভাবে ঈদ উদযাপন করছে জেলার বাকি মুসল্লীগণ। তাই মে মাসের প্রথম তিন দিনই চাঁদপুরে ছিলো ঈদের আমেজ।
চাঁদপুরে আগাম ঈদ উদযাপনের বিষয়টি গত ৯৩ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আল্লামা মোহাম্মদ ইসহাক ১৯২৮ সাল থেকে প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ইসলামের সব ধর্মীয় রীতিনীতি প্রচলন শুরু করেন। মাওলানা ইছহাকের মৃত্যুর পর থেকে তার ৬ ছেলে এ মতবাদের প্রচার চালিয়ে আসছেন।