বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫:১৪

প্রবাসীর পরিবারের দাবি হত্যা

রায়পুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।।
রায়পুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

গৃহবধূ মৌসুমি বেগম (২৫)। নয় ও দুই বছরের দুই সন্তান রয়েছে। নিহত হওয়ার আগে ১০ মিনিট কথা হয় সৌদি প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে। রাত ১টায় মৌসুমির ঝুলন্ত নিথর দেহের পায়ে দুধের জন্যে চিৎকার দিয়ে কাঁদছিলো দু বছরের শিশু কন্যা। এই চিৎকার শুনে শ্বশুর ও শাশুড়ি প্রবাসীর ঘরে গিয়ে দেখেন, মৌসুমির মৃতদেহ ঝুলছে। এতেই পুরো এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। সকালে হায়দরগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যরা এসে গৃহবধূর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেন।

গত রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে স্ত্রী আত্মহত্যা করেনি, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে আবুল কাশেম তার ফেসবুকে পোস্ট দেন। এতে পুরো গ্রামে তোলপাড় শুরু হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২ আগস্ট রাত ২টার সময় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চরআবাবিল ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ উদমারা গ্রামের আক্তার হাফেজ বেপারি বাড়িতে প্রবাসী কাশেমের ঘরে। গত এক মাসেও নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসায় উদ্বিগ্ন রয়েছে তার পরিবার।

গত ৩ আগস্ট ২০২৫ সকালে পুলিশ গৃহবধূ মৌসুমি বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্যে জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বড়োভাই জহির হোসেন বাদী হয়ে রায়পুর থানায় আত্মহত্যার মামলা করেন।

নিহতের স্বজনের দাবি, ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেননি। এলাকারই দু ব্যক্তি কৌশলে বসতঘরে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির চেষ্টা করে। এ সময় মৌসুমি চিনতে পারায় শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে মৃতদেহ বসতঘরের আড়ার সাথে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। মৌসুমি বেগম রায়পুরের দক্ষিণ চরআবাবিল ইউনিয়নের দক্ষিণ উদমারা গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট ২০২৫) বিকেলে সরেজমিন গেলে পুলিশ, এলাকাবাসী ও নিহত মৌসুমি বেগমের স্বজনরা জানান, প্রায় নয় বছর আগে একই গ্রামের মৌসুমি বেগমের সঙ্গে আবুল কাশেমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্থানীয় একটি কোম্পানিতে চাকুরি করতেন কাশেম। দাম্পত্য জীবন ভালো চলছিলো। গত তিন মাস আগে সৌদি আরবে যান আবুল কাশেম। গত ২ আগস্ট রাত ৮টায় ইমুতে মৌসুমির সঙ্গে প্রায় ১০ মিনিট কথা হয় আবুল কাশেমের। রাত ১টায় শিশু মেয়ের দুধের জন্যে চিৎকার শুনে শ্বশুর ও শাশুড়ি বসতঘরে গিয়ে দেখেন মৌসুমির মৃতদেহ ঝুলছে রশিতে।

খবর পেয়ে চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিরাজুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল আজিজসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে এসে হায়দরগঞ্জ ফাঁড়ি পুলিশকে খবর দেন। সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সকলের উপস্থিতিতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মৌসুমি বেগমের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে ময়নাতদন্তের জন্যে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

নিহতের বড়ো ভাই জহির বলেন, ‘মৌসুমি বেগমের স্বামী তিন মাস আগে সৌদি আরব যান। ৩ আগস্ট রাতে আমাদের মৌসুমির আত্মহত্যার কথা জানানো হয়। মৌসুমি আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নয়। ঘটনার পরদিন কয়েকজনের নাম দিয়ে হত্যা মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ আমার মামলা না নিয়ে আত্মহত্যার মামলা নিয়ে আমাকে চলে যেতে বলে। যারা মৌসুমির মৃতদেহ ধৌত করেছেন তারা বলেছেন গলায় ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ বলেছেন, ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলে বলা যাবে হত্যা না আত্মহত্যা করেছে মৌসুমি।

সোমবার আবুল কাশেম তার হোয়াটসঅ্যাপে এ প্রতিবেদককে জানান, গত ২ আগস্ট রাত ১১টায় ইমুতে মৌসুমির সঙ্গে ১০ মিনিট কথা বলেছেন। রাত ২টায় সংবাদ পান মৌসুমি আত্মহত্যা করেছেন। রাত ৮টায় প্রতিবেশী এক প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে বাচ্চাদের জন্যে দুধ আনতে গিয়েছিলেন মৌসুমি। এছাড়া প্রতিবেশী ওই নারীর এক স্বজনের সাথে রাতে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক দেখতে পান মৌসুমি। এ কারণে মৌসুমিকে হত্যা করা হয়। আমি ও আমার পরিবার ঘাতকদের খুঁজে বের করে হত্যার বিচার চাই।

নিহতের বসতঘরের ৫০ গজ দূরত্বে পাশের বাসিন্দা প্রবাসী মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩৮) বলেন, মৌসুমি শান্ত প্রকৃতির নারী ছিলো। প্রবাসী আবুল কাশেমের পরিবারের সাথে গৃহবধূ হিসেবে ভালো সম্পর্কই চলছিলো। ঘটনার রাতে আবুল কাশেমের সাথে মৌসুমির ঝগড়া তো হয়নি।।

ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হায়দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এসআইর উপস্থিতিতে গৃহবধূ মৌসুমির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। 'হত্যা না আত্নহত্যা' ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর জানা যাবে।

রায়পুরের হায়দরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির পরির্দশক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঝুলন্ত অবস্থায় বসতঘর থেকে মৌসুমির লাশটি উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় ইউডি মামলা হয়েছে। সুরতহল রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বলা যাবে 'আত্মহত্যা নাকি হত্যা'।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়