রায়পুরে শহর-গ্রামে বেড়েছে দুঃসাহসিক চুরি, ব্যাবসায়ীরা আতঙ্কে

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উপজেলাজুড়ে বেড়েছে চুরি। নানা কৌশলে চলমান চুরির ঘটনা যেন নিত্যদিনের। ব্যাবসায়ীদের অনুপস্থিতিতে দোকানের দরজা ভেঙ্গে ও উপরে চাল কেটে এ চুরি হচ্ছে। দিন দিন চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় রায়পুরে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরের একাধিক চক্র। এসব চক্রের বেশির ভাগ সদস্য উঠতি বয়সের তরুণ। চুরির অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্র ও চেতনানাশক ওষুধ।

তথ্যানুযায়ী, রোববার (৪ আগস্ট ২০২৫) রাতে রায়পুর ও হায়দরগঞ্জ সড়কের মিতালি বাজার এলাকায় ইলেকট্রিক ও স্বর্ণের দোকানে চুরি হয়। এ সময় ছুট্টুসহ দুই ব্যবসায়ীর জমির দলিল ও ৫ ভরি স্বর্ণসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র।।

শনিবার রাতে রায়পুর শহরের সাবেক সোনালী ব্যাংক সড়কে আমেনা ফার্মেসীর মালিক আরিফুল হক স্বপনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিনের চাল কেটে ভেতের প্রবেশ করে চোর চক্র। এ সময় ফ্রিজে থাকা এন্টিবায়েটিক সহ প্রায় ২০ লাখ টাকার ওষুধ চুরি করে চোর চক্র। এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে।

শুক্রবার রাতে রায়পুর শহরের নতুন বাজার এলাকায় কনফেকশনারী ব্যবসায়ী মো. শাহজাহানের (৬৫) দোকানের তাল ভেঙ্গে ৭০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোর চক্র। একই রাতে রায়পুর শহরের পীর বাড়ির সামনে টিসি সড়কে নুর হোসেন পাটোয়ারী (৭০) নামের ব্যবসায়ীর মুদি দোকানের লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায় চোর চক্র। এ ঘটনায় দু চোরকে আটক করলেও অভিভাবক ছাড়িয়ে নিয়ে যায় বলে সোমবার ব্যবসায়ী জানান।।

বৃহস্পতিবার রাতে রায়পুর পৌরসভার পরে দেবিপুর গ্রামের বেপারী বাড়ির দুবাই প্রবাসী জহিরের (৩৫) বসতঘরের তালা ভেঙ্গে দু লক্ষ টাকার মালামাল চুরি করে পাশের বাড়ির মাদকাসক্ত জাহাঙ্গীর (৪৫)। ঘটনার ৭ দিন পার হলেও জাহাঙ্গীরের লোকজনের কারণে বিচার পাচ্ছে না বলে জানান প্রবাসীর স্ত্রী নিশি। এলাকার কয়েকজন সমাজপতি বিচার হবে, করবেন বলেও কালক্ষেপণ করছেন।।

শনিবার বিকেলে শহরের মধ্যবাজার এলাকায় সৈকত নামের এক ব্যবসায়ীর আড়াই লাখ টাকা মূল্যের নতুন জিকসার মটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। পরে চাঁদপুর শহর থেকে উদ্ধার করে থানা পুলিশ। একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে শহর সহ উপজেলাজুড়ে।

রায়পুর উপজেলা বণিক সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আতংকে। চোর চক্রকে আটকের জন্যে পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পুরো শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সম্পাদক সাংবাদিক মাসুদুর রহমান খান ভুট্রু বলেন, কিছুদিন নয়, কয়েক মাস ধরেই রায়পুর ও সদরে শহর ও জেলা জুড়ে থামছে না চুরি-ছিনতাই। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় দিন দিন অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। থানা পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ী স্বপন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। শনিবার রাতে সন্দেহজনক চারজনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মালামালগুলো উদ্ধারে চেষ্টা করছি। প্রতিনিয়ত আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে। চোর ও ছিনতাইকারী চক্র ধরতে আমাদের বাড়তি টিমও কাজ করছে। অচিরেই সব অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।