শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৫

চাঁদপুর জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিং

ফরিদগঞ্জে মাকে নৃশংস হত্যায় ঘাতক ছেলে গ্রেফতার

ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার

মিজানুর রহমান
ফরিদগঞ্জে মাকে নৃশংস হত্যায় ঘাতক ছেলে গ্রেফতার

চাঁদপুরে

ছেলে কর্তৃক মা'কে গলা কেটে নৃশংস হত্যার ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে আসামী গ্রেফতার এবং মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের স্বামী আতর খাঁন।বিয়ের দাবি পূরণ না করায় শুক্রবার দুপুরে রাসেল তাঁর মাকে একা পেয়ে ধারালো কাঁচি দিয়ে পোঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায় এই তথ্য জানান।

প্রেস ব্রিফিং এ আরো জানানো হয়

মামলার বাদী আতর খাঁন ফরিদগঞ্জ থানাধীন রূপসা বাজারের পাশে একটি মাদ্রাসায় বাবুর্চির কাজ করেন। গ্রেফতারকৃত আসামী রাসেল (২৭) বাদীর ছোট ছেলে। সে ফরিদগঞ্জ বাজারের একটি মুদি দোকানে চাকুরী করত। বাদী তার স্ত্রী এবং ছোট ছেলে রাসেল'সহ ফরিদগঞ্জ থানাধীন ইছাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। বিগত তিন মাস যাবৎ বাদীর এই ছোট ছেলে গ্রেফতারকৃত আসামী রাসেল (২৭) উশৃঙ্খল আচরণ ও চলাফেরা করত। এতে তার পিতা-মাতা ছেলে রাসেলকে নিষেধ করলে আসামী তার পিতার-মাতার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং মারধর করে। বিষয়টি আতর খাঁন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন আহমেদ রাজনকে অবগত করলে আসামী তার পিতা মাতাকে প্রাণে হত্যা করে ফেলবে বলে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। অতঃপর বাদী আতর খাঁন গত ২৬ এপ্রিল,২০২৪ খ্রিঃ তারিখ ভোর ৫ টার সময় নিজ কর্মস্থল রূপসা মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাড়ি হতে বের হয়ে চলে যান। তখন আসামী রাসেল ও তার মা ভিকটিম রানু বেগম (৫৭) বাড়িতে ছিল।

ওইদিনই দুপুর অনুমান পৌণে তিনটার সময় আসামী রাসেল পিতা আতর খাঁনকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, "আমি মাকে জবাই করে লাশ ঘরে রেখে দিলাম" বলে ফোন কেটে দেয়। বাদী তাৎক্ষণিক মাদ্রাসা হতে তার বসত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে দুপুর অনুমান ০৩.১৫ ঘটিকার সময় বাড়িতে এসে তার বসত ঘরের খাটের উপর তার স্ত্রী ভিকটিম রানু বেগম (৫৭) এর গলা কাটা লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় বীভৎস এই দৃশ্য দেখে বাদী বুঝতে পারেন যে, তার ছোট ছেলে রাসেল তার মাকে কাঁচি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বাড়ি থেকে পালিয়েছে এবং সে ডাক চিৎকার দিলে ঐ বাড়িসহ আশপাশের বাড়ির লোকজন এসে উক্ত ঘটনা দেখতে পায়।

সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হাজীগঞ্জ সার্কেল পংকজ কুমার দে, অফিসার ইনচার্জ ফরিদগঞ্জসহ ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিম রানু বেগম (৫৭) এর লাশ গলা কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় তার বসত ঘরের খাটের উপর থেকে উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে।

এরপর চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) এর সার্বিক পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ কৌশলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদগঞ্জ থানাধীন কেরোয়া গ্রাম হতে ঘাতক আসামী রাসেলকে গ্রেফতার করে। আসামী রাসেলের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার পিতার দোচালা টিনশেড বসত ঘরের কাঁড়/দরমা হতে আসামী রাসেলের দেখানোমতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত রক্তমাখা কাঁচি (আল কাঁচি) এবং ঘটনার সময় আসামী কর্তৃক পরিহিত তার রক্তমাখা লুঙ্গি ও শার্ট উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে বাবা আতর কান থানায় হাজির হয়ে তার ছেলে রাসেল (২৭) এর বিরুদ্ধে লিখিতভাবে এজাহার দায়ের করলে এই হত্যা মামলাটি রুজু করা হয় ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় প্রেস ব্রিফিংকালে ঘটনা সম্পর্কে আরো বলেন, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট রাসেল দীর্ঘদিন ধরেই বিয়ে করার জন্য পরিবারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু ছেলে বেকার হওয়ায় তাঁর কথায় কেউ কর্ণপাত করেননি। বিয়ের দাবি পূরণ না করায় শুক্রবার দুপুরে রাসেল তাঁর মাকে একা পেয়ে ধারালো কাঁচি দিয়ে পোঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনার পর পরই চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার) এর সার্বিক দিক-নিদের্শনায় ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে এসআই মোঃ ইসমাইল হোসেন, এসআই মোঃ রুবেল ফরাজী, এএসআই মোঃ নাঈম হোসেন, এএসআই মোঃ মনিরুল ইসলাম'সহ একটি চৌকস টিমের কর্মতৎপরতায় এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আমরা হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রাপ্তির মাত্র ৪ (চার) ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এহেন হত্যাকান্ডটির মূল হোতা আসামী রাসেল (২৭) কে গ্রেফতারসহ ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধারসহ আসামীর স্বীকারোক্তি গ্রহন করা হয়।

তিনি বলেন,

যথাশ্রীঘ্রই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ ও তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী, ফরিদগঞ্জ থানার ওসি সাইদুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়