প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৪১
হাজীগঞ্জে সন্তান নিয়ে নারীর আত্মহত্যার ঘটনায় রেল পুলিশের মামলা
আবদুর রহমান নামের ১৬ মাসের পুত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে তাহমিনা আক্তার রিমা (২৪) নামের এক গৃহবধু আত্মহত্যার ঘটনায় রেল পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে রেল পুলিশ চাঁদপুরের আবেদনের কারনে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে মা -ছেলের ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) নিহত নারীর বাবা রফিকুল ইসলাম তার মেয়ে আর নাতির লাশ বুঝে নেন। একই দিন বাদ জোহর মা-ছেলের জানাজা শেষে রিমার বাবার বাড়ি হাজীগঞ্জের ধড্ডা দেওয়ানজী বাড়ির কবরস্থানে সন্তানসহ চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, কোলের সন্তানসহ
ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে নারী নিহতের ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় কোন অভিযোগ হয়নি তবে লাশ রেলের তাই বিষয়টি তারা দেখবে।
চাঁদপুর রেলপুলিশের অফিসার ইনচার্জ মাসুদ আহমেদ মুঠোফোনে জানান, সন্তানসহ মা রেলের কাটা পড়ার ঘটনায় একটি ইউডি মামলা দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লাশগুলো নিহত নারীর বাবার কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অপর এক প্রশ্নে তিনি আরো জানান, নিহত নারীর স্বামীর সাথে বনিবনা ছিলোনা, তালাকসহ নানান ঝামেলা ছিলো বলে জানতে পেরেছি।
উল্লেখ্য বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চাঁদপুর-লাকমাস রেলসড়কের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৬নং ওয়াডর্ডের মকিমাবাদ এলাকায় শিশু সন্তানকে কোলে ট্রেনের নীচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
নিহত তাহমিনা আক্তার রিমা উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা গ্রামের দেওয়ানজী বাড়ীর রফিকুল ইসলামের মেয়ে ও উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ির কুয়েত প্রবাসী মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের স্ত্রী। এই দম্পতির ৪ বছর বয়সি আরও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায, স্বামী সাথে পারিবারিক কলহের জেরে গত ২৮ মার্চ রিমা তার স্বামী বাকিলা ইউনিয়নের স্বর্ণা গ্রামের হাওলাদার বাড়ীর নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মাসুদুজ্জামান হাওলাদার (৪০), তার ভাসুর মামুন হাওলাদার (৫৫)ও মাহবুব হাওলাদার (৫০) বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রিমার বাবা তার স্বামী মাসুদুজ্জামানকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কুয়েত পাঠায়। বিদেশ যাওয়ার পর থেকে মাসুদ রিমাকে ভরণপোষণ ও তাদের (স্বামী) বাড়িতে না দিয়ে মোবাইল ফোনে সবসময় অশ্লিল ভাষায় গালমন্দ করেন এবং হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে রিমা বাধ্য হয়ে সম্প্রতি সময় মাসুদজ্জামানকে তালাক দেয়।
তালাকের পর স্বামী মাসুদুজ্জামান দেশে এসে রিমাকে ইমোতে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ ও প্রাণনাশ এবং স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমমি-ধমকি দেন। এ ঘটনায় ভাসুরদের জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রিমাকে হুমকি-ধমকি দেন বলে রিমার পরিবারের সদস্যরা জানান।
এক পর্যায়ে অপমান-অপদস্থ ও হুমকি-ধমকি সহ্য করতে না পেরে তার ষোল মাস বয়সি শিশু সন্তান আবদুর রহমানকে নিয়ে রিমা আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। তবে রিমা আত্মহত্যার পূর্বে তার ব্যবহৃত (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) ফেইসবুকে “আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়, তার মেয়েকে সবাই যেনো দেখে রাখে” উল্লেখ করে একটি পোস্ট দিয়েই ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিষয়টি হাজীগঞ্জে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।