মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদকের নিরাপদ রূট কি হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর?

ভৌগোলিক কারণে মাদক কারবারিরা এখন ডাকাতিয়া-নির্ভর ॥ সড়কে অভিযান অব্যাহত ॥ অরক্ষিত রেলপথ

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদকের নিরাপদ রূট কি হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর?
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর এখন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদক কারবারিদের কাছে মাদকের চালান পরিবহনের নিরাপদ আর প্রধান রূট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ক’দিনে পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে এমনটাই দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে আটককৃতদের পরিচয় দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদকের প্রধান রূট এখন হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর।

পুলিশ, ডিবি পুলিশ সড়কপথে বেশ ক’টি মাদকের চালান আটকের পর মাদক কারবারিরা এখন ডাকাতিয়া নদী ব্যবহার করছে। সম্প্রতি হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীতে র‌্যাব ট্রলারে ২৪ কেজি মাদক আটক করে। ডাকাতিয়া নদী মাদক পাচারের রূট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে র‌্যাবের অভিযানে হাজীগঞ্জবাসীর কাছে এমন বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। তবে বরাবর অরক্ষিত হয়ে আছে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ।

জানা যায়, দেশের পূর্বাঞ্চল কিংবা চট্টগ্রাম থেকে হাজীগঞ্জ হয়ে মাদক চলে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এ সকল মাদকের চালান সাধারণত ৩ রূটে বহন করে মাদক কারবারিরা। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশ, র‌্যাব কিংবা ডিবি পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকার কারণে সম্প্রতি মাদক কারবারিরা হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীকে ব্যবহার শুরু করেছে। ইতিমধ্যে হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব এক চালানে ২৪ কেজি গাঁজা জব্দ করে। হাজীগঞ্জ হয়ে চাঁদপুরে যাওয়ার প্রধান রূটের মধ্যে বাকি থাকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথ। যে কারণে উক্ত রেলপথ অরক্ষিত হয়ে আছে।

ভৌগোলিক কারণে কুমিল্লা বা চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যে কোনো কিছু পরিবহন করতে হলে ফরিদগঞ্জ হয়ে হাইমচর কিংবা চাঁদপুর সদরের হরিণা ফেরিঘাট কিংবা হাজীগঞ্জকে রূট হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। হাজীগঞ্জ থেকে নদীপথ, রেলপথ কিংবা সড়কপথে চাঁদপুরে যাওয়া একেবারে সহজ হওয়ায় মাদক কারবারিরা সহজে এ পথগুলো ব্যবহার করছে। বিশেষ করে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক বরাবর নিরাপদ বিধায় তারা এ রূটকে সবসময় মাদক পাচারের রূট হিসেবে বেছে নেয়। সম্প্রতি উক্ত রূটে বিভিন্ন বাহিনীর ব্যাপক অভিযানে একের পর চালান আটকের পর মাদক কারবারিরা ডাকাতিয়া নদী তথা নৌপথকে বেছে নেয়। হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীতে ট্রলারে মাদক পাচারের বিষয়টি মূলত এর পরেই প্রকাশ্যে চলে আসে। ঠিক রেলপথ মাদক কারবারিদের কাছে কতটা নিরাপদ তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে সড়কপথ ও নৌপথের মতো রেলপথে সমান হারে অভিযান অব্যাহত রাখতে পারলে হয়তো উক্ত রূটে মাদক পাচার রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের অভিযান সূত্রে জানা যায়, গত ৮ আগস্ট চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জের বলাখাল এলাকায় পুলিশ ১০ কেজি গাঁজাসহ আটক করে শিউলি খাতুন নামের এক নারীকে। উক্ত নারী কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরে উক্ত চালান নিয়ে যাচ্ছিলো। শিউলি খুলনার বাগেরহাট জেলার মোংলা থানাধীন উত্তর চাঁদপাই গ্রামের বাসিন্দা। গত ১০ আগস্ট র‌্যাব-১১-এর একটি দল হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীতে অভিযান চালিয়ে চাঁদপুরমুখী ট্রলার থেকে ২ মাদক কারবারিকে গ্রেফতারসহ ২৪ কেজি গাঁজা জব্দ করে। গ্রেফতারকৃত মোখলেস খলিফা পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদের স্বরূপকাঠি থানার শ্যারনকাঠি গ্রামের ও ইদ্রিস হাওলাদার বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার জুকিরকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। গত ৮ আগস্ট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জের কৈয়ারপুল এলাকার রেলক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী পরিবহনে অভিযান চালিয়ে ৩ কেজি গাঁজা জব্দসহ ২ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সালমান শেখ (২৬) ও রাজিব শেখ (৩১) গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার বাসিন্দা। ১ আগস্ট জেলা গোয়েন্দা পুলিশ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জের কৈয়ারপুল এলাকার রেলক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় চাঁদপুরগামী যাত্রীবাহী পরিবহনে অভিযান চালিয়ে ৪ কেজি গাঁজা জব্দসহ ১ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সফিক শেখ শরিয়তপুর জেলার ডামুড্যা থানার বাসিন্দা। শুধু চলতি মাসে যে ক’টি গাঁজার চালান আটক করা হয়েছে তার মধ্যে সকল মাদক পরিবহন কিংবা মাদক কারবারির বাড়ি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদকের প্রধান রূট এখন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ।

১০ কেজি গাঁজা জব্দের তদন্ত কর্মকর্তা ও ডাকাতিয়া নদীতে ট্রলারসহ ২৪ কেজি গাঁজা জব্দের ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় মাদক আইনে র‌্যারের দায়ের করা নিয়মিত মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মিছবাহুল আলম চৌধুরী বলেন, গ্রেফতারকৃত সবাইকে আদালতে নেয়ার পর আদালত তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। র‌্যাবের হাতে আটককৃতরা ডাকাতিয়া নদী ব্যবহার করে মাদক নিয়ে সরাসরি তাদের নিজ এলাকায় যাচ্ছিলো।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ জানান, গাঁজার মূল চালানগুলো সাধারণত ভারত থেকে কুমিল্লা বা এ অঞ্চল থেকে চাঁদপুর হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঢুকে। যে সকল ব্যক্তি মাদকের বড় চালান নিয়ে আটক হচ্ছে তাদের ঠিকানা দেখেই বোঝা যায় তারা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাদকের চালান নিয়ে যায়।

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সড়কপথে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নৌপথ আর রেলপথে সুনির্দিষ্টভাবে ম্যাসেজ পেলে অভিযান করা হবে।

র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার কোম্পানী কমান্ডার মেজর সাকিব হোসেন জানান, মাদক কারবারিরা যে রূটই ব্যবহার করুক এ বিষয়ে আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।

রেলপথের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, রেললাইনকেন্দ্রিক আমাদের কাজ চলমান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়