প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২২, ০০:০০
রূপসায় পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীদের অবরুদ্ধ করার ঘটনায় মামলা

অব্যাহত লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে গত ২০জুন সোমবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে কয়েকজন বিদ্যুৎকর্মী অবরুদ্ধের পর লাঞ্ছিত হয়। এক পর্যায়ে রূপসা জমিদারদের বংশধর মেহেদী হাসান চৌধুরী কোনোরকমে জনতার আক্রোশ থেকে তাদের রক্ষা করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ফরিদগঞ্জ জোনাল শাখা কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করেছে। ২১জুন মঙ্গলবার ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ পল্লীবিদ্যুতের এজিএম (কম)-এর দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন।
|আরো খবর
জানা গেছে, বিদ্যুতের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হলেও তার পুরোপুরি সুফল পাচ্ছে না ফরিদগঞ্জ উপজেলাবাসী। বরং দিনের পর দিন উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েই চলছে। উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। কখনও কখনও বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে ফ্রিজ, এসি, কম্পিউটার, মোবাইলসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভাতেই বেশ ক’জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লোডশেডিংয়ের বিষয়টি তুলে ধরেন।
গুপ্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে আমরা অতিষ্ঠ। গড়ে দিনে কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
ধানুয়া এলাকার মনির হোসেন জানান, প্রতিদিন ৪/৫ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। তাহলে এতো বিদ্যুৎ কোথায় যায়? এসব কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ।
অগ্রণী ব্যাংক রূপসা বাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মামুন হোসেন জানান, গত একমাস ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের সেবাদান ব্যাহত হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা চালু রাখতে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জবাবদিহির মুখে পড়েছি।
চান্দ্রা বাজারের কাঠমিস্ত্রি আমিন বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা যারা দিনমজুর হিসেবে কাজ করছি তারা দুর্ভোগের শিকার। বিদ্যুতের কারণে কাজ না হলে আমরা হাজিরা থেকে বঞ্চিত হই।
গ্রামাঞ্চলে লোকজন বিদ্যুতের এই দুরবস্থায় বিক্ষুব্ধ। কয়েকদিন পূর্বে চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ ফরিদগঞ্জ জোনাল শাখার লোকজন রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রূপসা বাজারে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে মাইকিং করতে গিয়ে জনরোষের শিকার হন। পরবর্তীতে রূপসা জমিদার পরিবারের সদস্য ও মোতওয়াল্লি সৈয়দ মেহেদী হাসান চৌধুরীর বাসায় তার উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হয়। কিন্তু পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃৃপক্ষ সেখানে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে বলে স্বীকার করলেও ঘটনাস্থল থেকে এসে বোল পাল্টে ফেলে। ঘটনার মীমাংসাকারীদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দায়ের করে।
মামলায় ঐতিহ্যবাহী রূপসা জমিদার পরিবারের সদস্য সৈয়দ মেহেদী হাসান চৌধুরীকে প্রধান আসামী এবং রূপসা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান, এশিয়ান টিভির চাঁদপুর প্রতিনিধি জাহিদ হোসেনসহ ৮জন নামীয় ও অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জনকে আসামী করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রূপসা জমিদার পরিবারের সদস্য সৈয়দ মেহেদী হাসান চৌধুরী জানান, ঘটনার দিন বিক্ষুব্ধ লোকজন পল্লীবিদুতের কর্মীদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা শুনে আমি তাদেরকে আমার নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে নিরাপদে রাখি। পরে আমার উপস্থিতিতেই বিষয়টির সুরাহা হয়। কিন্তু তারা এখন আমার নামেই মামলা দায়ের করলো। তিনি আরো বলেন, রূপসা এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের সাবস্টেশন স্থাপনের জন্য আমি নিজে জমি দেয়ার প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছি।
পল্লীবিদ্যুৎ কর্র্তৃপক্ষের মামলা দায়ের করার বিষয়টি স্বীকার করে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদ হোসেন জানান, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।
মামলা ও লোডশেডিংয়ের বিষয়ে ফরিদগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম প্রকৌশলী কামাল হোসেন জানান, রূপসার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। এ সময় তিনি ফরিদগঞ্জে লোডশেডিং নেই বলে জানান। যান্ত্রিক সমস্যার কারণে গত কয়েকদিন ৪/৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিলো না।