প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
বিশেষ সাক্ষাৎকার : ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন
চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করার সুযোগ অনেক বেশি
বাবার ইচ্ছায় আর স্বপ্নপূরণে তিনি চিকিৎসকের মতো মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মনে করেন, চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করার সুযোগ অনেক বেশি। তিনি রোগীদের আপন করে নিতেই বেশি খুশি হন। বলছিলাম চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিনের কথা। তিনি মতলব উত্তর উপজেলার কৃতী সন্তান। ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন ২০০৯ সালে চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে যোগদান করেন।
|আরো খবর
২৯ আগস্ট রোববার ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক মুখোমুখি হন ‘চাঁদপুর কণ্ঠে’র ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের। সাক্ষাৎকার নেন আল-আমিন হোসাইন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে বেশ ভালো আছি। করোনা মহামারিতেও মহান আল্লাহ আমাকে এবং আমার পরিবারকে এ পর্যন্ত সুস্থ রেখেছেন। এজন্যে আমি মহান আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া আদায় করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে চাঁদপুরে। আমার জন্ম মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রামে। বাবার চাকুরির সুবাদে আমি চাঁদপুর শহরে বসবাস করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : আমার জন্মস্থান দুর্গাপুর ইউনিয়নের আনোয়ারপুর গ্রামে প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা করি। সেখানকার হাইস্কুলে এক বছর পড়াশোনার পর বাবার চাকুরির সুবাদে চাঁদপুরে চলে আসি। তারপর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আমি সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হই। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। এমবিবিএস পাস করি ঢাকার মগবাজারস্থ হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ থেকে। আমরা ছিলাম সেই কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : ছোটবেলায় যখন বাবা-চাচাদের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতাম তখন থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করি আমিও একজন সুচিকিৎসক হবো। মানুষের সেবা করবো। আমি মনে করি, চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা করার সুযোগ অনেক বেশি। চিকিৎসক একজন মানুষের মনের কথাগুলো শুনতে পারেন। তাছাড়া আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো আমি যেনো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করি। বলতে পারেন, আমি আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করেছি। সাথে আমারও।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা একদিকে যেমন আবেগের, তেমনি কষ্টেরও। কারণ আমি চিকিৎসক হওয়ার তিন বছর আগেই আমার বাবা ইন্তেকাল করেন। যেদিন আমার এমবিবিএস পরীক্ষার রেজাল্ট দিলো এবং আমি পাস করি, সেদিন গ্রামে গিয়ে প্রথমে বাবার কবর জিয়ারত করি। তখন আমার দাদা অসুস্থ ছিলেন। দাদা ছিলেন স্ট্রোকের রোগী। দাদাকে আমি প্রথম চিকিৎসাসেবা দিই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরে যোগদান করেছেন কবে?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : ২০০৯ সালের ২ অক্টোবর আমি চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে যোগদান করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : আমি যেহেতু ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ, তাই আমার কাছে ডায়াবেটিক রোগ-সংশ্লিষ্ট রোগীই বেশি আসেন। তাছাড়া কিডনী এবং প্রেসারের রোগীও আসেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : যেসব রোগী আমার কাছে আসেন, তারা আমার আত্মীয়ের মতো। তাদেরকে আমার আপন মনে হয়। তারাও আমাকে আপন করে নেন। রোগীদের কাছে আমার প্রত্যাশা হলো-নিয়ম-মাফিক জীবন-যাপন করে সুস্থ থাকুন। আর সুস্থ থাকতে নিয়মিত হাঁটাচলা করুন, ব্যায়াম করুন, পরিমিত খাবার গ্রহণ করুন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কেননা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। জীবনে সুস্থ থাকাটা আমাদের জন্যে খুবই জরুরি। সুস্থ থাকাটা মহান আল্লাহর নিয়ামত।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : চিকিৎসাজীবনের সুখের কথা হলো, আমি প্রথম আমার দাদাকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করি। আগেই বলেছি, আমার বাবা খুব সখ করে আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। বাবা স্বপ্ন দেখতেন আমি একদিন চিকিৎসক হবো। আর দুঃখের স্মৃতি হলো, চিকিৎসক হয়ে আমি বাবার সামনে দাঁড়াতে পারিনি। কেননা আমার বাবা আমি চিকিৎসক হওয়ার তিন বছর আগে ইন্তেকাল করেন। এ দুঃখ কখনো ভোলার নয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : আমি যেহেতু ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিই, তাই তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে খুব বেশি একটা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছি না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : বাংলাদেশ সরকারের যতো মাথাব্যথা মূলত সরকারি চিকিৎসকদের ঘিরে। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথমেই এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসতাম। কেননা, যারা আজকে এমবিবিএস পাস করে সদ্য চিকিৎসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আমি প্রথম থেকেই তাদের নিয়ে ভাবতাম। কারণ, নতুনরা পাস করার পরে নানা রকম হতাশায় ভোগে। তাদেরকে কীভাবে উপজেলা, ইউনিয়ন কিংবা যে যেখানকার বাসিন্দা তাদেরকে সেখানে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে চিন্তা করতাম। তাদের যোগদানের নিশ্চয়তা প্রদান করতাম। সরকার থেকে ন্যূনতম একটা খরচ হলেও তাদেরকে এনে দিতাম। ফলে তারা মানসিক শান্তি পেতো। এতে করে একজন নতুন চিকিৎসক রোগীদের মনোযোগ সহকারে চিকিৎসাসেবা দিতে পারতো। ফলে চিকিৎসাসেবার সামগ্রিক মান আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে করে সরকার যেমন একজন চিকিৎসক পেতো, মানুষও সহজেই তাদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারতো।
দ্বিতীয়ত, মানুষের সুচিকিৎসাসেবা প্রদানে জরুরি যেসব সামগ্রী প্রয়োজন তা নিশ্চিতে কাজ করতাম। জেলা থেকে শুরু করে একেবারে প্রান্তিক পর্যন্ত স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করতাম। যেমন আইসিইউ বেড, টিকা, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সুব্যবস্থা রাখতাম। কেননা, বর্তমানে করোনা মহামারি চলছে। অক্সিজেনের অভাবেও কিন্তু মানুষ মারা যাচ্ছে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতকে সার্বিকভাবে কীভাবে আরো ঢেলে সাজানো যায় সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে কাজ করতাম। মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসাসেবা পৌঁছাতাম।
চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে আমি একটা কথাই বলবো, সেটা হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কেননা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প কিছু নেই। নিয়মিত খাবারের আগে হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাশি দেয়ার পর হাত পরিষ্কার করতে হবে। অপরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি, নিজের পরিবারের সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। তাহলেই কিন্তু সামগ্রিক সমাজে একটা পরিবর্তন চলে আসবে। সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
আর ডায়াবেটিকমুক্ত জীবনযাপন করতে হলে আমাদেরকে নিয়মমাফিক খাওয়া-দাওয়া করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমোতে হবে, নিয়মিত হাঁটাচলা করতে হবে। বাইরের খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না। ভাজাপোড়া খাবার বর্জন করতে হবে। মানসিক চিন্তা পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত ওজন যেনো না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই ডায়াবেটিকমুক্ত বলি, রোগমুক্ত জীবনযাপন বলি এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বলি সবকিছু থেকে অনেকটা মুক্ত থাকা সম্ভব।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ৬ সেপ্টেম্বর ডায়াবেটিস সেবা দিবস এ সম্পর্কে কিছু বলুন।
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : ডায়াবেটিস সেবা দিবসে আমার একটাই চাওয়া থাকবে, যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা চিকিৎসকের নিয়মমাফিক চলুন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ওষুধই কিন্তু সবকিছু না, নিয়মটাই প্রথম। কারণ শৃঙ্খলাই জীবন। আমাদের জীবনটাকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : অবসর সময়ে আমি প্রচুর পড়াশোনা করি। আগেই বলেছি, আমি যেহেতু একজন ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, তাই আমি অবসর সময়ে চেষ্টা করি ডায়াবেটিক-সংক্রান্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে আরো জানতে। যাতে রোগীদের ভালোভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা যায়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন : ধন্যবাদ।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর
ই-মেইল : [email protected]